লকডাউনের ৮ম দিন: ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ, রাস্তায় বেড়েছে যানবাহন ও লোক চলাচল
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে আজ অন্য দিনের চেয়ে ঢাকার রাস্তায় যানবাহন তুলনামূলক বেশি চলাচল করেছে। রাজধানীর রাস্তায় জনমানুষের চলাচলও ছিল উল্লেখযোগ্য।
জরুরি সেবার কাজ ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কার্যকর করতে রাজধানীর রাস্তায় আজও অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, আজ অধিক সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন অজুহাতে রাস্তায় বের হচ্ছেন। যারা রাস্তায় বের হবার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেননি, তাদের অপরাধের মাত্রা বুঝে জরিমানা বা আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। তবে যাদের কোর্টে চালান করা হয়েছে, তাদের অনেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ।
এদিকে লকডাউনের কারনে আয় রোজগারের সঙ্কটে থাকা হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তার দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারীর মাঝে এদেশের মানুষের ঘাড়ে “অব্যবস্থাপনাজনিত মহামারি” চাপিয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকার। করোনার ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে কর্মহীন দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্যে এবং নগদ অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা না করে মানুষকে ঘরে বন্দি থাকতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে ‘লকডাউন’ একটি নিষ্ঠুর রসিকতায় পরিণত হয়েছে। চলমান লকডাউন যেন কর্মহীন কোটি কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খাদ্যাভাবে মারার অমানবিক হাতিয়ার।
ওদিকে, করোনা ভয়াবহতার মাঝেও বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে গাজীপুরে এবং নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা।
দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ
লকডাউন প্রত্যাহার করে ঈদের আগে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর আরডিএ মার্কেটের সামনে ব্যবসায়ী-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যৌথ উদ্যোগে শূন্য থালা হাতে ‘ভাত দে ভাত দে, দোকানপাট খুলে দে, নইলে লকডাউন তুলে লে’ ইত্যাদি স্লোগানে সোচ্চার হয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ঈদ উপলক্ষে দোকানপাট খোলা রাখতে চান।
গাজীপুরে সড়ক অবরোধ
ওদিকে, বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে গাজীপুরে এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের লক্ষ্মীপুরা এলাকায় ঢাকা-গাজীপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। শ্রমিকদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের ৮ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। প্রতি মাসেই বেতনের জন্য শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হয়। গত ঈদের আগেও আন্দোলন করে বেতন নিতে হয়েছে। মে মাসে আন্দোলন করা হলে কারখানার কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৪ জুন বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু সেদিন বেতন না দিয়ে ফের ২২ জুন, এরপর ২৮ জুন বেতন দেওয়া তারিখ ঘোষণা করা হয়। এভাবে টালবাহানা করে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তাঁদের বেতন দেওয়া হয়নি।
এতে শ্রমিক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আজ সকাল ৯টায় কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার সামনে গাজীপুর-ঢাকা মহাসড়ক বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নেন। এতে দুই পাশে পণ্যবাহী যানবাহনের যানজট সৃষ্টি হয়। গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক ও স্টাফরা বেতন পাচ্ছেন না। বেতনের দাবিতে তাঁরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ
অনুরূপভাবে , বকেয়া বেতনভাতার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে মহাসড়ক করেছেন ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা গ্রুপের শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা চার মাস ধরে বেতনভাতা পাচ্ছে না । কারখানাটি বর্তমানে বন্ধ আছে। মালিকপক্ষ বিভিন্ন সময় বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখছে না। এ কারণে তারা মহাসড়কে নেমেছেন। এদিকে অবরোধের কারণে কাঁচপুর সেতু থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ী এমনকি রোগী পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়ে সেতুর দুপাশে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান দুপুরে জানিয়েছেন, বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা দুটি মহাসড়ক অবরোধ করেছে। তাঁদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা চলছে।
লক ডাউনের অমানবিকতা
লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে দু’একটি ক্ষেত্রে অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে এরকম একটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মো. ফারুক নামের ত্রিশ বছর বয়সী এক শারীরিক প্রতিবন্ধী । তার পা ও কোমরে প্রতিবন্ধকতা থাকায় প্রতিবন্ধী কার্ডও ঝোলানো ছিল গলায়।
তিনি জানান, গতকাল নিজের ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে একজন রোগী নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে মহাখালীতে একটি হাসপাতালে নামিয়ে দিয়েছেন। এরপর ফেরার পথে বংশালে তাকে আটক করে চকবাজার থানা-পুলিশ। সারা রাত চকবাজার থানা হেফাজতে থাকার পর,আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় সিএমএম কোর্টে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট তাঁকে ১০০ টাকা জরিমানা করে।
মো. ফারুকের ব্যাটারিচালিত রিকশাটি পড়ে আছে চকবাজার থানায়। গাড়ি ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। সঙ্গে তাঁর স্বজনেরাও উপস্থিত ছিলেন। এ অবস্থায় দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে মাথা ঘুরে পরে যান তিনি। আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের ফারুক কাতর কণ্ঠে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। কাজ না করলে কী খাব? গাড়িটা ফেরত না দিলে মারা যাব।’#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।