বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বড় বন্যার আশঙ্কা: ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরের মানুষ
বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলোতে ধেয়ে আসছে বন্যা। দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং সীমান্তের অপার থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরের প্রধান নদীধারা যমুনা এবং তার শাখা নদীগুলিতে পানি ক্রমশ বাড়ছে।
পানি উয়ন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বর্তমানে কোনো নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও সপ্তাহখানেক পর অর্থাৎ ঈদের পরপরই ফুলেফেঁপে উঠতে পারে বন্যাপ্রবণ কয়েকটি নদ-নদীর পানি। যমুনার কূল ভেসে দেখা দিতে পানে বন্যা পরিস্থিতি।
ইতোমধ্যেই, তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্রের পানির বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদে ২২ জুলাই নাগাদ বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ২৩ জুলাই বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে ।
এছাড়া বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি ২৩ জুলাই বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
ফলে যমুনার উভয় তীরের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। আরা যমুনার পানি ২৫ সেন্টিমিটার উপরে উঠলে জামালপুরের জেলায় বড় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করছেন পানিবিশেষজ্ঞরা।
এ অবস্থায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদী পুর্বাভাসে আশঙ্কা করা হয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে জামালপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়ায় বড় বন্যা দেখা দিতে পারে।
এদিকে, দেশের মধ্য অঞ্চলে পদ্মার পানি গোয়ালন্দে বিপদসীমার কাছাকাছি চলে যেতে পারে ঈদের পরদিন থেকে। এছাড়া মেঘনার পানি চাঁদপুরে, ধলেশ্বরীর পানি ইলাসিনঘাটে বিপদসীমা ছাড়াতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে। ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে ১৮ জুলাইয়ের দিকে। এ ক্ষেত্রে বর্ষণ স্থায়ী হলে বেড়ে যাবে উত্তরের নদ-নদীগুলোর পানি।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, আপাতত আগামী ৭ দিনে ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় পানি বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া, এসময় ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং ঢাকার নদীসমূহের অববাহিকায় বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।
কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে
এদিকে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় আজ (বুধবার) দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সাথে দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ছয়টায় সমাপ্ত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে সর্বোচ্চ ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কাল ও পরশু আবহাওয়ার অবস্থা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। পরের পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরের মানুষ
এদিকে, উত্তরাঞ্চলে তিস্তা-ধরলা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকা থেকে শুরু করে উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল হয়ে পদ্মা-মেঘনার ভাটি ও মোহনা অবধি ব্যাপক আকারে নদীভাঙন দেখা দিয়েছ।
নদ-নদীর ঘূর্ণিস্রোতে তীর ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি, ক্ষেত-খামার হারিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছে হাজারো পরিবার।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকার মজিদ শেখের পাড়ায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে হঠাৎ করে পদ্মায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বিলীন হয়েছে অন্তত পনেরটি বসতবাড়ি। সরিয়ে নিতে হয়েছে আরো অন্তত ৫০টি বসতবাড়ি।
নদী ভাঙ্গনের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটের দৌলতদিয়ায় লঞ্চঘাটের পল্টুন সরিয়ে রাখা হয়েছে। আপাতত ঘাট স্থাপন না করা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘাটের ম্যানেজার।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুল হক খান মামুন বলেন, হঠাৎ করে পদ্মায় নদীর লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে বেশ কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের কথা জানার পর প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সুনামগঞ্জ থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হবতপুর গ্রামের ২৫ পরিবারের ফসলি জমি আর বসতভিটা সুরমা নদীর ভাঙনে চলে গেছে। দিন দিন ভাঙনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দা। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।