বাংলাদেশে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফের বন্যার আশংকা, ভাঙছে নদীর পার
(last modified Tue, 17 Aug 2021 12:54:35 GMT )
আগস্ট ১৭, ২০২১ ১৮:৫৪ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফের বন্যার আশংকা,  ভাঙছে নদীর পার

কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পদ্মা-যমুনা অববাহিকায় আবারো এক দফা বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ৩৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১০১ সেন্টিমিটার ও কাজীপুর পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে চলতি বছরে পানি বাড়ার হার এটাই সর্বোচ্চ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৩ আগস্ট) থেকে হঠাৎ করে যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। যা বর্তমানে খুব দ্রুত বাড়ছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, দু-একদিন পানি বাড়তে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে।

মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে শিবালয়ে আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীতে গত এক সপ্তাহে ৪১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। গাজীখালি, ইছামতি, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে মাঝারি বন্যার পূর্বাভাসের কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।  

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। যমুনা পয়েন্টেও প্রতিদিন পানি বাড়ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে দুই বা তিন দিনের মধ্যে যমুনা পয়েন্টও পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এ পয়েন্টে মাঝারি বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

টানা বর্ষণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আর শিবগঞ্জে পদ্মায় আর মহানন্দায় পানি বেড়েই চলেছে। ফলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে অন্তত ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও ওই এলাকাগুলোতে প্রায় ১৮২ হেক্টর জমির ফসল সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো নিম্ন অঞ্চল হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ১৬৭ হেক্টর আউশ ধান আর ১২ হেক্টর শাকসবজি, ৩ হেক্টর অনান্য ফসলসহ মোট ১৮২ হেক্টর জমিতে হওয়া ফসল ও শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাজাহানপুর, নারায়ণপুর, আলাতুলি, চড়বাগডাংগা আর শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর, পাকা ও উজিরপুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও চড়বাগডাংগা।  শিবগঞ্জের দূর্লভপুর আর পাকা ইউনিয়নে বেশি প্লাবিত হয়েছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোমিন শরীফ জানান, তার এলাকায় গত ৪ দিন থেকে পদ্মায় পানি বাড়ায় প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় ১০ সেন্টিমিটার ও মহানন্দায় ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।  বর্তমানে পদ্মায় ২২ দশমিক ৬ মিটার ও মহানন্দায় ২০ দশমিক ৪৫ মিটার পানি রয়েছে। পদ্মায় ২২ দশমিক ৫০ মিটার ও মহানন্দায় ২১ দশমিক ৫০ মিটার বিপৎসীমা ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে তবে মহানন্দা নদী তার বিপৎসীমা অতিক্রম করতে এখনও অনেক সময় লাগবে। এছাড়াও কয়েকটি ইউনিয়ন নিম্নাঞ্চল হওয়ায় পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চড়বাগডাংগায় পদ্মায় দুইদিনে শত বিঘারও উপরে জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও দুতলা বিশিষ্ট ৩টি বিল্ডিং নদীতে নেমে গেছে।

ফরিদপুর

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বুড়াইচ ইউনিয়নের চরখোলাবাড়িয়া গ্রামটি এখন মধুমতির করাল গ্রাসে প্রায় ছিন্ন ভিন্ন হতে চলেছে। সোমবার (১৬ আগস্ট) মধুমতি ভয়াবহ রুপ ধারন করে একই দিনে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ওই গ্রামের ১০টি পরিবারের ঘরবাড়ি গ্রাস করেছে। এদের অনেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা বাজার এলাকা ও টগরবন্দের বাজড়া গ্রামটিও ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে।

বৃষ্টিপাত

এদিকে, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হবার পর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সাথে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।  আবহাওয়া পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অদূরে অন্ধ প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অদূরে উড়িষ্যা উপকূলে অবস্থান করছে। এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মৌসুমী বায়ূর অক্ষের বাড়তি অংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বাড়তি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ূ বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।#

 

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

 

ট্যাগ