আগস্ট ২৬, ২০২১ ১৭:৪৮ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৫ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে খোলার সিদ্ধান্ত

করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছক আকারে টিকা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠাতে হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ টিকার আওতায় আসবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন হলসহ সব কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে এ সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক গতকাল মঙ্গলবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আহ্বান জানিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় না খুলে দেওয়া না হলে প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষকগণ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতীকী ক্লাস নেওয়া শুরু করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিখো নেটওয়ার্ক দাবি করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টেস্ট এবং টিকাদানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে হলে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরা কোভিড টেস্ট এবং টিকাগ্রহণে অগ্রাধিকার পায়। ক্যাম্পাসে ব্যবস্থা করা গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ভিড় এড়িয়ে টিকা নিতে পারবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত এক বছর ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা হতাশ হয়েছি কারণ আমাদের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে, যথেষ্ট পূর্ব-প্রস্তুতি ছাড়াই অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ফেলা হয়েছে নানা প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে। এটি নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। অনলাইন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করে নিজস্ব সামর্থ বৃদ্ধি না করে গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে এবং কনফারেন্সিং অ্যাপ জুমে এক ধরনের জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সারা বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই (অনেক দেশে সংক্রমণের হার আমাদের থেকে বেশি থাকা অবস্থাতেও) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানাভাবে খোলা ছিল। ইতালি, ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকায় যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছিলো তখনও এসব দেশ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়নি। যেখানে লকডাউন বা রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয় সেসব জায়গায় কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল যদিও অনলাইন ক্লাস চালু ছিল। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও কখনো পুরো দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা হয়নি। যেখানে সংক্রমণ বেশি খারাপ সেখানে স্কুল সাময়িক বন্ধ রেখেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা মনে করি, বাংলাদেশে শিক্ষায়তন খুলে না দেবার মনোভাবটি পাবলিক শিক্ষাকে দুর্বল বা অনুপযুক্ত দেখানোর অভিপ্রায় থেকে আসতে পারে। এই মনোভাবটি নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নতুন কিছু নয়। তবে করোনা উপলক্ষে এই ধরনের মানসিকতা একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা মনে করি, সব কিছু খুলে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে শিক্ষার প্রতি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি অন্যায় করছি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কীভাবে চালু করা যায় সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে ফেরার সুযোগ করে দিতে হবে। আবাসিক হলে প্রথমে শুধু অনার্স এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা, যারা তাদের শিক্ষা জীবনের শেষের দিকে রয়েছে তাদের ওঠার অনুমতি থাকবে। আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না করে কোনোভাবে এই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা যাবে না।

ছাত্রাবাসগুলোতে যাতে শুধু শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে অবস্থান করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থিত মেডিকেল সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইসোলেশনের ব্যবস্থা, অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের দেখাশোনার ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সর্বশেষ ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার সেফটি নেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন। আজ  বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে সংগঠনটি।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশে অবৈতনিক ও সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা সরকারের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও অবদান রেখে চলেছে। একসঙ্গেই পিএসসি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেনের ফলাফল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক ভালো।

এই দীর্ঘ বন্ধকালীন সময়ে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন উল্লেখ করেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ নুরুন নবী। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। মাস পার হলেই সব ধরনের খরচ দরজায় কড়া নাড়তে থাকে। স্বাভাবিক জীবন ধারণ আমাদের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, এসব চাপ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সহকর্মীরা কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ পেশা পরিবর্তন করে দিন মজুর, রিকশা চালক, শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, ফুটপাতের ব্যবসায়ী হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছে। যা দেশের জন্য লজ্জাজনক।

করোনাকালীন কোনো আর্থিক সুবিধা বা সহযোগিতা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা না পাওয়ায় এ সময় শিক্ষামন্ত্রীকে অযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেন সংগঠনটির মহাসচিব এম জাহাঙ্গীর কবির রানা। তিনি বলেন, লেখাপড়া করে বেকার না থেকে উদ্যোক্তা হয়ে দেশের কাজে অংশ নিতে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা সমাজের ৮ লাখের বেকার যুবকের বেকারত্ব দূর করেছি এবং প্রায় এক হাজার কোটি শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছি। এরপরও আমরা সার্বিকভাবে অবহেলার শিকার হচ্ছি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস আমরা বারবার আশার আলো দেখেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান খুলবে, আমরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছি। সবকিছু খুলে দেওয়া হলেও শুধুমাত্র বন্ধ থাকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক।#

 

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ