সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১ ১৪:৪২ Asia/Dhaka

করোনাকালীন আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে পাওয়া ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময় চায় পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।

১৮ কিস্তির পরিবর্তে ৩৬ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ চেয়েছেন সংগঠনের নেতারা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ। গতকাল (মঙ্গলবার) অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সাথে এক বৈঠকে এ অনুরোধ জানানো হয়। 

বৈঠকে বিজিএমইএ’র প্রতিনিধি দলের নেতারা বলেন, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পোশাক শিল্পের কঠিন সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে। সেই অবস্থা এখনও কাটেনি। এই সংকটময় সময়ে তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য সরকারের দেওয়া ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, করোনার শুরুতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। দ্বিতীয় দফায় আরও বাড়িয়ে ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এক হাজার ৮০০ পোশাক কারখানা এই প্যাকেজ থেকে ঋণ পেয়েছে।

সাইফুল হক

প্রণোদনার ঋণ পরিশোধের কিস্তি বাড়ানোর ব্যাপারে বিজিএমইএ’র দাবি প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক সাইফুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকট মোকাবেলায় মূলত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা মেটানোর জন্য প্রণোদনার প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল পোশাক কারখানা মালিকদের। সে লক্ষ্য যে পুরোপুরি হাসিল হয়নি তা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের রিপোর্টে এবং গবেষণা জরিপে প্রকাশ পেয়েছে। তাই এবার আবার ঋণ পরিশোধের কিস্তির মেয়াদ বাড়ালে তা শ্রমিকদের কোন কল্যাণে আসবে না বরং তেলা মাথায় তেল ঢালা হবে।

ওদিকে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, ঋণদান এবং ঋণ নিয়ে খেলাফি হয়ে যাওয়া- এভাবে জনগণের অর্থ লুটপাট করার যে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন চক্র সৃষ্টি হয়েছে তা ভাঙতে না পারলে দেশের গোটা অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

‘কোনো ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করানো যাবে না’ 

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকালই জানিয়ে দিয়েছে, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন থেকে কোনো ঋণ আর তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করতে পারবে না। আর তৃতীয় দফা পুনঃতফসিলের পরও কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি স্বভাবজাত বা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া পুনঃতফসিল করা ঋণের শুধুমাত্র যেটুকু আদায় হবে তার বিপরীতে সুদ আয় খাতে নেওয়া যাবে।

মঙ্গলবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের এমন একটি নীতিমালা জারী করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই না করেই বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। পরিশোধসূচি পুনঃনির্ধারণ এবং যথাযথভাবে পুনঃতফসিল প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় এসব প্রতিষ্ঠানের আদায়ের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না। এখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেবলমাত্র- নিন্মমান, সন্দেহজনক ও ক্ষতিজনক- এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবে। ঋণ নিয়মিত করার প্রতি পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত হারে ডাউনপেমেন্ট নিতে হবে।।

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদিত ঋণ পুনঃতফসিলের একটি নীতিমালা থাকতে হবে। সেখানে এমন সব শর্ত দিতে হবে যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালার চেয়ে কোনোভাবে সহজ হবে না। পুনঃতফসিলের আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কমিটি লিখিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে যৌক্তিকতা ও প্রভাব তুলে ধরবে। সংশ্নিষ্ট গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য তার নগদ প্রবাহ বিবরণী, নিরীক্ষিত স্থিতিপত্র, আয়-ব্যয় ও অন্যান্য আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা করতে হবে।# 

 

ট্যাগ