আমরণ অনশনে ১১ নির্যাতিত ছাত্র
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়া সেই শিক্ষিকা সাময়িক বরখাস্ত
-
ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন
১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ (বৃহস্পতিবার) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, রাত ৮টায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানে ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত ভিসি আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব-৩ সৈয়দা নওয়ারা জাহান ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলী।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরবর্তী সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, প্রবিধি, নীতিমালা এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মুখে তিন পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। তিনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ, সিন্ডিকেটের সদস্য ও প্রক্টর কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তাঁর স্থায়ী পদত্যাগের দাবিতে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আব্দুল লতিফের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি এ পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবারও আমরণ অনশনে রয়েছেন ১১ নির্যাতিত ছাত্র। তাদের মধ্যে ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা হলেন, জাহিদুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম, মাজিদুল ইসলাম ও জাকারিয়া। এদের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলি মেডিকেল ও শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া দিনভর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হওয়া পারীক্ষার সময়সূচি নিয়ে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় ওই শিক্ষার্থীদের চুল কেটে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার হলে যেতে বলেন ওই শিক্ষক। পর দিন হলে প্রবেশের সময় ১৪ জন ছাত্র চুল কেটে না আসায় তাদের সামনের অংশের চুল কেটে দেন তিনি। অপমান সইতে না পেরে নাজমুল হোসেন তুহিন (২৫) নামে এক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মাহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি সহপাঠীরা টের পেয়ে দ্রুত শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
ছাত্রদের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।