পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার: মহানগরে বাস ভাড়া সর্বনিম্ন ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারা দেশে চলমান পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই মহানগরসহ সারাদেশে পরিবহন চলাচল শুরু করেছে। পরিবহন মালিকদের দাবীর মুখে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পরিবহন ভাড়াও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৭ নভেম্বর) বাসের ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে পরিবহন মালিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের বৈঠক শেষ এ ঘোষনা দেওয়া হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থকে প্রতি কিলোমিটারে দূরপাল্লার বাস ভাড়া এক টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মহানগরে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। বর্ধিত ভাড়া সোমবার (৮ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মহানগরে বাস ভাড়া সর্বনিম্ন ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সিএনজি চালিত বাস ভাড়া এর আওতায় আসবে না বলে জানানো হয়েছে।
গত বুধবার (৩ নভেম্বর) ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা এবং বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) এলপি গ্যাসের দাম প্রতি কেজির সিলিন্ডারে ৫৪ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার।
কিন্তু কোনো আলোচনা ছাড়াই তেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন খরচ অনেক বাড়বে দাবি করে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কেন্দ্রীয়ভাবে ধর্মঘটের কোনো ঘোষণা না দিলেও জেলা পর্যায় থেকে মালিক-শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় ঢাকাগামী যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায় শুক্রবার (৫ নভেম্বর) থেকে।
এদিকে, শনিবার (৬ নভেম্বর) থেকে লঞ্চের ভাড়া বাড়াতে সরকারের প্রতি দাবি জানায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক সমিতি। এ নিয়ে বিআইডব্লিউটি’এর সঙ্গে লঞ্চ মালিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ বৈঠকে বসে। রোববার (৭ নভেম্বর) বিআইডব্লিউটিএ ভবনে এ বৈঠক হয়। নৌ ও সড়ক পথে পরিবহন সংকটের ফলে যাত্রীর চাপ গিয়ে পড়েছে ট্রেনের ঘাড়ে। আন্ত নগরের অবস্থা তুলনামূলক কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর চাপে বেসামাল কমিউটার ট্রেন।
এদিকে আজ তৃতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘট থাকার কারনে পথে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। যান চলাচল বন্ধ থাকায় আজ সকালেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস না পেয়ে অফিসগামী যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে বিআরটিসির দু’একটি বাস চললেও তাতে বাদুড়ঝোলা হয়ে মানুষ উঠছেন। এ ছাড়া রাজধানীর রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা কিংবা লেগুনাতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান, কাভার্ডভ্যানে চড়েও যাচ্ছেন কর্মস্থল ও গন্তব্যে।
পরিবহন সঙ্কট ও সরবরাহ বিঘ্নিত হবার প্রভাব পড়েছে পণ্যের বাজারে। বিশেষ করে সবজির সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় দাম বেড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। প্রতিটি নিত্যপণ্য কিনতে ক্রেতাকে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সাধারণত শীতের মৌসুমে সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। মাত্র শীতের সবজি বাজারে আসছে। দামও কমের দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে দাম আরো বাড়বে এবং মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
এর আগে, সবশেষ ২০১৫ সালে নগর পরিবহনে বাসের ভাড়া প্রতি কিলেমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের জন্য এক টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। পরের বছর ২০১৬ সালে দূরপাল্লায় ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় প্রতি কিলেমিটারে এক টাকা ৪২ পয়সা।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।