‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা নিয়ে মিথ্যাচার’ নামক বই:
এক নজরে পশ্চিমা গণমাধ্যমের ৩৮ হাজার ইরানবিরোধী মিথ্যা
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা নিয়ে মিথ্যাচার’ নামক বইটিতে মাত্র ৪৬ দিনে ৫টি ইরানবিদ্বেষী পশ্চিমা দেশ থেকে সম্প্রচারিত ফার্সি ভাষাভাষী গণমাধ্যমের ৩৮ হাজারের বেশি মিথ্যা পর্যালোচনা করা হয়েছে।
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা নিয়ে মিথ্যাচার’ নামক বইটিতে ইরানে ২০২২ সালে পশ্চিমা-সমর্থিত দাঙ্গার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যাচারগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ইরানের বিরোধিতাকারী বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ২০২২ সালে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানের পরিকল্পনা করে এবং অর্থনৈতিক সমস্যার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কেন্দ্র করে একটি সমন্বিত দাঙ্গা বাধানোর করার পরিকল্পনা হাতে নেয়।
পশ্চিমা বিদ্বেষী দেশগুলো যখন তাদের ওই পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশি হেফাজতে ইরানি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যু তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মহা সুযোগ এনে নেয় এবং তারা নির্ধারিত সময়ে আগেই রাস্তায় নেমে পড়ে।
ইরানের কুর্দি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু এই তরুণীর মৃত্যু দাঙ্গা শুরু করার জন্য আমেরিকাসহ পশ্চিমা নেতাদের সামনে সেই মোক্ষম সুযোগটি এনে দেয় যার জন্য তারা বহুকাল অপেক্ষা করছিল।
এ সময় ঔপনিবেশিক দেশগুলির ফার্সি ভাষার গণমাধ্যম ও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলি ইরানে দাঙ্গা সৃষ্টি করার জন্য ২৪ ঘন্টা ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, বিবিসি ফার্সি টিভি, যেটি ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারণায় নিজেকে পেশাদার এবং নিরপেক্ষ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করে আসছিল, সেটি এ সময় তার নিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে ফেলে এবং ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে নেমে পড়ে।
বইটিতে ইরানে অস্থিতিশীলতা চলার সময় পাঁচটি ইরান-বিরোধী পশ্চিমা গণমাধ্যমের তৎপরতা পর্যালোচনা করা হয়েছে। ওই পাঁচ মিডিয়া হচ্ছে, ব্রিটিশ সরকারের অর্থে পরিচালিত বিবিসি ফার্সি, সৌদি ও ইসরায়েলি অর্থে পরিচালিত ইরান ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন সরকারের অর্থে পরিচালিত ভয়েস অফ আমেরিকা ও রেডিও ফারদা এবং বৃটিশ ও ইসরাইলি অর্থে পরিচালিত ‘মান ও তু’। এসব গণমাধ্যম ও তাদের ভার্চুয়াল পেজগুলি ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৪৬ দিন ধরে যে তৎপরতা চালায় তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই পাঁচটি ফার্সি ভাষার গণমাধ্যম ৩৮ হাজারেরও বেশি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছে।
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা নিয়ে মিথ্যাচার’ নামক বইটি আসলে মিথ্যাচার, উদ্ভট দাবি এবং হত্যাকাণ্ডের একটি পর্যালোচনা যা পশ্চিমা আধিপত্যবাদী সরকারগুলির গণমাধ্যম ২০২২ সালের দাঙ্গায় ইরানি জনগণের আস্থা ও শান্তি ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করেছিল।
এই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ইরানি নিরপত্তা বাহিনীর হাতে কথিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে পাশ্চাত্যপন্থিদের পক্ষ থেকে চালানো প্রচারণার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনায় ২০২২ সালের গ্রীষ্মের শেষ দিনগুলিতে ইরানের বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া প্রতিটি ব্যক্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়া হয়।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের কাছে ইরানের সুন্দরী কিশোরী মেয়েরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল; কারণ ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ নামক বানোয়াট শ্লোগানের সঙ্গে তা আরও সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। এদিকে, দুর্ঘটনা ও মারামরি করে যারা মারা গেছে বা আত্মহত্যা করেছে এমন মেয়ে ও ছেলেরাও পুলিশ ও সরকারি এজেন্টদের হাতে নিহত হয়েছে বলে প্রচার চালানো হয়।
এমনকি এর বাইরে যারা জীবিত ছিল তাদের অনেককেও মৃত বলে চালিয়ে দেয়া হয়। অন্য কিছু লোক যারা নিজেদের (সন্ত্রাসী এবং গুণ্ডা) হাতে নিহত হয়েছে তাদের হত্যাকাণ্ডের জন্যও পুলিশ এবং ইরান সরকারকে দায়ী করা হতে থাকে।
মার্কিন সমর্থিত ইরানবিরোধী দাঙ্গাবাজরা হত্যাকাণ্ডের গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি জনমতকে উস্কে দেয়া, জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করা এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ব্যাপক ও সমন্বিত মিথ্যাচার চালায়।
এই বিভ্রান্তিকর অশুভ শক্তি ধরে নিয়েছিল তাদের দাঙ্গার ফলে ইরানের ইসলামী শাসনব্যবস্থার অবসান হতে যাচ্ছে। এ কারণে তারা ইসলামি ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে অসুস্থ বানানো থেকে শুরু করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কর্মকর্তাদের পশ্চিমা দেশগুলোতে পলায়ন করা পর্যন্ত গুজব ছড়াতে থাকে।
পশ্চিমা সমর্থিত দাঙ্গাবাজরা জনগণকে উস্কে দিতে পুরনো ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে। একটি স্থানের ভিডিওকে বিভিন্ন শহরের নামে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ইরানি জনগণ ব্যাপকভাবে সরকার বিরোধী প্রতিবাদে শামিল হয়েছে- এমন একটি আবহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এই অপকর্ম করা হয়।
এ সময়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও ছাত্র-সাংবাদিকদের ব্যাপক গ্রেপ্তারের মিথ্যা খবর এবং বন্দি নির্যাতনের গুজবও শত্রু মিডিয়ার এজেন্ডায় অগ্রাধিকার পাচ্ছিল।
আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের ইসলামি সরকারের পতন হতে যাচ্ছে বলে ধরে নিয়েছিল এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শক্তিকে ‘প্রস্তুত থাকার’ নির্দেশ দিয়েছিল। এর পাশাপাশি দাঙ্গাকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে সেলিব্রিটিদের কাজে লাগানো হয়েছিল।
সেলিব্রিটিদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন এমন যারা আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করছিলেন এবং ইরান-বিরোধী দাঙ্গাবাজদের প্রতি তাদের আসক্তি প্রকাশ করেছিলেন।
ইরান বিরোধী দাঙ্গাবাজদের সঙ্গে সহযোগিতাকারী এই সেলিব্রিটিদের কেউ কেউ আবার সে সময় ইরানে অবস্থান করছিলেন।
ইরানে অবস্থানকারী সেলিব্রিটিদের একটি অংশ পশ্চিমাদের খুশি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিল। এর মাধ্যমে তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণ ও শাসন ব্যবস্থাকে আঘাত করে ইউরোপ ও আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ তৈরি করে নেয়ার চেষ্টা করেছিল।
এরমধ্যে এমন অনেক ব্যক্তিত্ব ছিল যারা বিপ্লব-বিরোধী মিডিয়ার চাপে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছিল, এমনকি তাদের কেউ কেউ একথা ঘোষণা করেছিল যে, তারা আর ইরানে কোনো কাজ করবে না। কয়েক মাস পরে, যখন পরিস্থিতি শান্ত হয় তখন সেলিব্রিটিদের এই অংশটি প্রকাশ্যে আর কোনো কথা বলেনি কিন্তু গোপনে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
সাংবাদিকদের গবেষণামূলক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বইটি লিখেছেন হামিদরেজা তাজি। #
পার্সটুডে/এমএমআই/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।