যুদ্ধ থামাতে ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক ও বাণিজ্য-সম্পর্ক ছিন্ন করা জরুরি
ইসরাইলের সঙ্গে ন্যাটোর সহযোগিতার বিষয়ে স্পেন ও তুরস্কের প্রতিবাদ
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, উত্তর আটলান্টিক সামরিক সহযোগিতার জোট তথা ন্যাটো ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে পারে না, কারণ ইসরাইল ন্যাটোর মৌলিক নীতিমালা ও মূল্যবোধগুলো লঙ্ঘন করছে।
এরদোগান ওয়াশিংটনে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেছেন। ওই বৈঠকে ইউক্রেনও অংশ নিয়েছে।
এরদোগান বলেছেন, ইসরাইল গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। এরদোগানের আগে স্পেন গাজা ও ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে ন্যাটোকে সমান দৃষ্টির নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনে ন্যাটোর শীর্ষ-সম্মেলনের সমাপনী ইশতেহারে গাজার ব্যাপারে একটি শব্দও স্থান পায়নি!
ইরানি বিশ্লেষক আলী নিকমানেশ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ন্যাটো জোট ও গোটা পাশ্চাত্য বৈশ্বিক ঘটনা-প্রবাহের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি ও আচরণ দেখিয়ে আসছে। আর গাজা সংকটের ক্ষেত্রে তাদের এই ভণ্ডামি খুব ভালোভাবে চোখে পড়ছে। তুরস্ক ও এমনকি স্পেনের মত ন্যাটোর কোনো কোনো সদস্যর দৃষ্টিভঙ্গি গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধের দ্রুত অবসানে সহায়ক হতে পারে।
এরদোগানের বক্তব্য অনুযায়ী ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিআমিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রেখে গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাকে হুমকিগ্রস্ত করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন তিনি ন্যাটোর সম্মেলনে তার সঙ্গে যে দেশেরই সরকার-প্রধান বা নেতার সঙ্গে দেখা হয়েছে সেই সাক্ষাতে তিনি অধিকৃত ফিলিস্তিনে বিশেষ করে গাজায় যেসব বিপর্যয় ঘটেছে সেসবের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি তুরস্কও ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে যাতে গাজায় তার অপরাধযজ্ঞের অবসান ঘটায়। কিন্তু মার্কিন সরকারের সর্বাত্মক মদদপুষ্ট নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ-বিরতি প্রতিষ্ঠায় সম্মত হচ্ছে না, বরং গাজায় নৃশংস অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের ঘোষিত স্কুল-কেন্দ্রীক দু'টি শরণার্থী শিবিরে নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে ইসরাইল বিপুল সংখ্যক বেসামরিক ও প্রতিরক্ষাবিহীন ফিলিস্তিনিকে হতাহত করেছে যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বক্তব্য অনুযায়ী হেগের আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা মামলায় শরিক হয়েছে তুরস্কও। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরাইলের বিচার অনুষ্ঠানের আয়োজন ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর পাশাপাশি শিশু-ঘাতক ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক ও বাণিজ্য-সম্পর্ক ছিন্ন করা অনেক বেশি কার্যকর পন্থা এবং এভাবে খুব দ্রুত যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলকে বাধ্য করা সম্ভব হতে পারে।
গাজায় ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ ও গণহত্যা বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশের ঘটনা সত্ত্বেও এখন গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলকে বাধ্য করার মত পরিপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে পারেনি মুসলিম সরকারগুলো।
ইহুদিবাদী ইসরাইল গত বছরের (২০২৩) ৭ অক্টোবর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরে মজলুম ও প্রতিরক্ষাহীন ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি বর্বরতায় এ পর্যন্ত গাজায় ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ ও ৮৭ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে।
ইসরাইলের অস্তিত্ব গড়ে ওঠে ১৯১৭ সালে উপনিবেশবাদী ব্রিটেনের ব্যালফোর নামক ঘোষণার আলোকে এবং বিশ্বের নানা অঞ্চল থেকে ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে অভিবাসন করতে উৎসাহ যুগিয়ে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল তার অস্তিত্ব ঘোষণা করে। সেই থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার এবং গোটা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডগুলোকে দখলে নেয়ার নানা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বিশ্বের কয়েকটি দেশ ইসলামী জনশাসনতান্ত্রিক ইরানের দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইসরাইলি উপনিবেশবাদী শাসন বিলুপ্ত করার ও ইহুদিবাদীদেরকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জোরালো দাবি জানাচ্ছে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।