শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিন হত্যা মামলা
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫২টিতে। এর মধ্যে ১৩৬টিই হত্যা মামলা।
গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) ফারহানের বাবা শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ অভিযোগ দাখিল করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন– ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ ফজলে শামস পরশ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনান, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমারসহ ৫৪ জন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় শ্রমিক দলের কর্মী রিয়াজুল তালুকদার গুলিতে নিহত ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী জহিরুল হাসান মুকুল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজ (মঙ্গলবার) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে নিহতের ভাই রুবেল তালুকদার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল, সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সাবেক সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, নাহিম রাজ্জাক।
এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনকেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট বিকেল ৫টার সময় যাত্রাবাড়ী থানার চার রাস্তার মোড়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা একদফা আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের সব অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এ সময় বাদীর ভাই যাত্রাবাড়ী থানার শ্রমিক দলের কর্মী মো. রিয়াজুল তালুকদার গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় এ কিশোরসহ দুজনকে হত্যার পৃথক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকেও আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরও আসামি।
আজ (মঙ্গলবার) ঢাকার ঢাকার মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেনের আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয়। পরে আদালত বাদীদের জবানবন্দি নিয়ে থানার পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযোগ এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
১৪ বছর বয়সী কিশোর মাহমুদুল হাসান জয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, তার স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদেরসহ ৩৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় হামিম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদ এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রংধনু গ্রুপের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম রফিককেও আসামি করা হয়েছে।
নিহত কিশোর মাহমুদুল হাসান জয়ের পূর্ব পরিচিত দাবি করে এই মামলাটি দায়ের করেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সাত মসজিদ হাউজিংয়ের ২৩ /এ বাড়ির বাসিন্দা মো. রবিউল আউয়াল। তিনি বর্তমান ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন-যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার শনির আখড়া ওয়ালটন শোরুমের সামনে।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন—শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসান মাহমুদ, জোনায়েদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিবি প্রধান হারুন অর রশীদ প্রমুখ।
মামলায় বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কিশোর মাহমুদুল হাসান জয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিল। গত ৫ আগস্ট সে ছাত্র আন্দোলনের ডাকা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে যোগদান করে। ওই দিন সকাল ১১টায় যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া ব্রিজের কাছে পৌঁছালে অন্যান্যদের সঙ্গে মাহমুদুল হাসান জয়ও গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।#
পার্সটুডে/এমএআর/১০