সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পেছনে অভ্যন্তরীণ তিনটি বড় কারণ
২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বাশার আল-আসাদ ২৪ বছর ধরে সিরিয়ায় ক্ষমতায় ছিলেন এবং আসাদ পরিবার মোট ৫৪ বছর ধরে এই দেশে ক্ষমতায় ছিল। বাশার আসাদের পতনের সাথে সাথে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ক্ষমতা কার্যত শেষ হয়ে যায়। বাশার আল-আসাদের পতনের পেছনে অনেক অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক কারণ রয়েছে, তবে অভ্যন্তরীণ কারণগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল দেশটির তীব্র অর্থনৈতিক সমস্যা এবং সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন হারানো। উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সাত বছরের যুদ্ধ এবং সিরিয়ার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশটির অর্থনৈতিক আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং সেইসাথে সিরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যা তীব্র হওয়ার অন্যতম কারণ।
নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি এবং জনগণের জীবনমান কঠিন হয়ে যাওয়ার ফলে দেশটির স্থিতিশীলতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং জনগণ অধৈর্য হয়ে পড়ে। এর অনিবার্য পরিণতিতে বাশার আল-আসাদের সরকার কার্যত জনসমর্থন হারিয়ে ফেলে।
সিরিয়ার আসাদ সরকারের পতনে দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল তা হচ্ছে, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অবস্থান। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার সেনাবাহিনী দেশটির ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য দায়েশ বা আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু এবার সিরিয়ার সেনাবাহিনী বিরোধী গোষ্ঠীর নতুন দফা হামলার সময় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়নি এবং আসাদ বিরোধী এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোনো ইচ্ছাও তাদের ছিল না।
কারণ প্রবল অর্থনৈতিক সমস্যা সিরিয়ার সেনাবাহিনীকেও প্রভাবিত করেছিল এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় তাদের কম বেতন সরকারকে অসহযোগিতা করার অন্যতম কারণ ছিল। ভূ-রাজনীতির অধ্যাপক আব্দুর রেজা ফারজি রাদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন: "সিরিয়া সরকারের বিরোধী গোষ্ঠীগুলো দ্রুত ইদলিব থেকে আলেপ্পোতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল এবং তারপর সিরিয়ার দক্ষিণে একের পর এক অন্যান্য শহর দখল করে নেয়। আর এটা সম্ভব হয়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে।
সিরিয়ায় ভয়ানক এবং লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির কারণে সামরিক বাহিনীও সশস্ত্র বিরোধীদের মোকাবেলা করার কোনো দৃঢ় সংকল্প ছিল না; কারণ সৈন্যদের বেতন নিয়মিত দেওয়া হতো না কিংবা মূল্যস্ফীতি এত বেশি ছিল যে মূলত সরকারও সৈন্যদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছিল।
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ কারণ হচ্ছে, ২০১৭ সালে সন্ত্রাসীদের পরাজয়ের পর গত ৭ বছরে বাশার আল-আসাদ কার্যত সিরিয়ার ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কারের কোনো প্রচেষ্টা চালাননি। ফলে সরকারের সমালোচকরা অর্থাৎ বিরোধী দলগুলো দেশটির ক্ষমতা থেকে দূরে ছিল।
এই বিষয়টিও বিরোধী দলগুলোকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে হাত মেলাতে, সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে জোট গঠন করতে এবং আসাদ সরকারকে উৎখাত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।