'হারানো মনোবল’ ফিরে পেতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ: আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আসক'র উদ্বেগ
https://parstoday.ir/bn/news/event-i151204
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পরও টালমাটাল দেশটির পুলিশ বাহিনী। তাদের মনোবল ভেঙে পড়েছে, চেইন অব কমান্ড ছিন্নভিন্ন। গত বছরের ৮ আগস্ট নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রথম দিকের কয়েক সপ্তাহে এই কথাগুলো ছিল বহুল আলোচিত। কিছু সময়ের জন্য সেগুলো যথার্থও মনে হয়েছিল।
(last modified 2025-08-16T11:35:34+00:00 )
আগস্ট ১৬, ২০২৫ ১৭:৩১ Asia/Dhaka
  • \'হারানো মনোবল’ ফিরে পেতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ
    \'হারানো মনোবল’ ফিরে পেতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পরও টালমাটাল দেশটির পুলিশ বাহিনী। তাদের মনোবল ভেঙে পড়েছে, চেইন অব কমান্ড ছিন্নভিন্ন। গত বছরের ৮ আগস্ট নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রথম দিকের কয়েক সপ্তাহে এই কথাগুলো ছিল বহুল আলোচিত। কিছু সময়ের জন্য সেগুলো যথার্থও মনে হয়েছিল।

আন্দোলন দমনে নির্বিচারে গুলি ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগসহ সহিংস অবস্থানের কারণে তীব্র জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যার অভিযোগে এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সদস্যদের মধ্যে তীব্র ভয়ের সঞ্চার হয়।

ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাহিনীর মনোবল ফেরাতে একগুচ্ছ উদ্যোগ নেয়। আনা হয় নতুন নেতৃত্ব, বাড়ানো হয় ঝুঁকি ভাতা এবং দেওয়া হয় পদোন্নতি।কিন্তু তাতে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। বরং তারা 'মনোবল হারানোর' ফলে অপরাধের হার বাড়ছে।

 প্রতিশোধের ভয়, অভিজ্ঞ কর্মকর্তার অভাব ও জনগণের আস্থা হারানোর কারণে অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্পৃহা দেখাতে দ্বিধাগ্রস্ত। একের পর এক সহিংস ঘটনার কারণ হিসেবেও এটাকেই দেখানো হচ্ছে।

এমনকি পুলিশপ্রধান বাহারুল আলমও সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, তার নেতৃত্বে থাকা বাহিনীটি এখনো প্রত্যাশিত কার্যকারিতা দেখাতে পারছে না।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সহিংস ঘটনা মোকাবিলা করতে তারা অনীহা প্রকাশ করেন এই আশঙ্কা থেকে যে, বড় আকারে বিপদে পড়লে তারা কোনো সহযোগিতা পাবেন না।

তারা উল্লেখ করেন, গত বছরের আগস্ট থেকে মানুষ পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করে চলেছে। কিছু কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই আন্দোলনের সময় অন্তত ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হলেও তাদের হত্যার বিচার নিশ্চিতে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অনেক কর্মকর্তা জানান, তাদের পরিবারের সদস্যরা সবসময় ভয়ে থাকেন এবং কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যেন না যান, সে ব্যাপারে অনুরোধ করতে থাকে। তারা বলেন, তাদের মনোবল ভেঙে পড়ার মূল কারণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি—যারা হয় বরখাস্ত হয়েছেন, অথবা পলাতক। তাদের ভাষ্য, বর্তমান কর্মকর্তাদের অনেকের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে, তারা কার্যকরভাবে দিকনির্দেশনা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর এক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, 'কনস্টেবলদের ঘটনাস্থলে যেতে বললে অনেকেই যেতে চান না। কারণ, পুলিশ সদস্যরা মাঝে মাঝেই স্থানীয়দের হামলার শিকার হতে হচ্ছে, আর গালিগালাজের শিকার হওয়া তো নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার।'

ঢাকায় কর্মরত এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বলেন, 'রাজনৈতিক সরকারের সময়ে পুলিশ সহযোগিতা পেত প্রশাসনের। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। তাই কর্মকর্তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দুবার ভাবেন।' একই সুর ভেসে আসে আরেক এএসআইয়ের কণ্ঠে। তিনি বলেন, 'অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, এখন সংঘাত এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, আমরা বিপদে পড়লে রক্ষা করার কেউ নেই।'

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা

গত কয়েক মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন, আর অপরাধীরা নির্বিঘ্নে অপরাধ করে চলে যাচ্ছেন।

গত ৬ আগস্ট গাজীপুরে অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ অনুসন্ধানকালে দিনের আলোয় এক সাংবাদিককে চাঁদাবাজরা পুলিশের সামনেই মারধর করে। পুলিশ সদস্যদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর মূল্যায়নে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সম্প্রতি বলেছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। ৭ আগস্টের এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, ইচ্ছাকৃত গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে, সঙ্গে হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও চলছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে নাগরিকরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। পুলিশের সদর দপ্তরের ডেটাবেসও অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতাই দেখাচ্ছে।

কঠোর ব্যবস্থা জরুরি

আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে কঠোর নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে, তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের পর প্রতিশোধমূলক হামলা ও পাল্টা সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেটা হয়নি।

'শেষ পর্যন্ত প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়েছে। মানুষ পাল্টা সহিংসতায় যায়নি। এ কারণেই আমি বলব, পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো,' যোগ করেন তিনি।#

পার্সটুডে/জিএআর/১৬