ইতালির প্রধানমন্ত্রী সত্যিই কি প্রশংসার যোগ্য?
-
জর্জিয়া মেলোনি, ইতালির প্রধানমন্ত্রী
পার্সটুডে: বিশ্বের বিভিন্ন রাজনীতিবিদের পক্ষ থেকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিকে নানাভাবে প্রশংসা করার বিষয়টি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
গত সোমবার গাজা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য মিশরের শার্মুশ-শেইখে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিকে 'খুবই সুন্দরী' বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্পের বক্তব্যের সময় মেলোনি তার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন:
"ইতালির একজন সুন্দরী তরুণ মহিলা প্রধানমন্ত্রী রয়েছে। আমাকে এটা বলতে অনুমতি নেই কারণ আপনি যদি এটি বলেন, তাহলে আপনার রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটবে; কিন্তু তিনি একজন সুন্দরী মহিলা। আমেরিকায় যদি আপনি কোনও মহিলাকে 'সুন্দরী' শব্দটি ব্যবহার করেন, তবে এটি আপনার রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটাবে; কিন্তু আমি ঝুঁকি নিয়ে বলছি।"
এরপর ট্রাম্প মেলোনিকে আরও প্রশংসা করে বলেন, তিনি একজন সম্মানিত ও সফল রাজনীতিক।
পার্সটুডে-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ট্রাম্পই নন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানও শার্মুশ-শেইখে মেলোনির সঙ্গে করমর্দনের সময় বলেন:
“আমি দেখেছি, আপনি যখন বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নামছিলেন—আপনাকে দারুণ লাগছিল।”
কয়েক মাস আগে আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা, জর্জিয়া মেলোনির সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন—যা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
মেলোনির মুখোশের আড়ালে কোন নারী লুকিয়ে আছেন?
মেলোনিকে ঘিরে এই প্রশংসার বন্যার মধ্যেই অনেকের মতে, তার মুখোশের আড়ালে আরেক নারী লুকিয়ে আছেন—একজন যাঁর নাম এখন গাজার যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত।
সাম্প্রতিক সময়ে মেলোনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তাঁর এবং তাঁর দুই মন্ত্রীর নাম “গণহত্যায় সহায়তার” অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দাখিল করা হয়েছে।
মেলোনির বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলায় প্রায় ৫০ জন স্বাক্ষর করেছেন—যাদের মধ্যে রয়েছেন আইন অধ্যাপক, আইনজীবী এবং কয়েকজন জনসাধারণের ব্যক্তিত্ব। অভিযোগে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতি ইতালির সরকারের সমর্থন—বিশেষত প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে গাজার চলমান গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সহায়তার শামিল।
ইতালিতে বসবাসরত তিউনিশিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মাজদি আল-কারাবি বলেন: “এই মামলা আন্তর্জাতিক জবাবদিহির পথে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি ফিলিস্তিনের পক্ষে কাজ করা আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফল, এবং আমি এর একজন স্বাক্ষরকারী হতে পেরে গর্বিত।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অভিযোগ সরাসরি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি নাগরিক, কর্মী, একাডেমিক ও আইনি বিশেষজ্ঞ এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
মেলোনির হামাসবিরোধী অবস্থান
মেলোনি একটি দক্ষিণপন্থী সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন—যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। যদিও তিনি বলেছেন, ইতালি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সমর্থন জানায় এবং গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে, কিন্তু তাঁর মতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কোনো সরকারি ভূমিকা থাকা উচিত নয়।
ইতালিতে মেলোনির সঙ্গে জনগণের রাজনৈতিক বিভাজন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইতালির সরকার ও জনগণের মধ্যে একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক টানাপোড়েন রয়েছে। একদিকে, ইতালির জনগণ গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছেন; অন্যদিকে, মেলোনির সরকার ইসরায়েলি ফুটবল দলের খেলার আয়োজন করছে।
ইতালি ও ইসরায়েলের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি এখন ইতালির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সময়ে খেলা আয়োজনের জন্য সরকারের জেদের পেছনে স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
মেলোনির সরকার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইঙ্গিত দিতে চেয়েছে যে, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ক্রীড়া বা রাজনৈতিক বয়কটে যোগ দিতে আগ্রহী নয় এবং তেলআবিবের একনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেই থাকবে।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৮