বিএনপির জরিপ
নির্বাচনের আগে ভাবমূর্তি ফেরানোর পরিকল্পনায় বিএনপি
-
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি
আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমত গঠন, বিরোধী দলের সমালোচনার জবাব ও সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজা শেষে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশ্যেই এই প্রচারাভিযান। বিএনপি নেতারা জানান, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বৈঠক, সমাবেশ ও আলোচনার মাধ্যমে এই প্রচারণা চালানো হবে।
বিএনপি এরইমধ্যে নির্বাচনে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে তারা আলোচনা করবে।
সরাসরি ভোটে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে এমন নারী নেত্রীদেরও একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ঘোষিত বিএনপির ৩১ দফা এজেন্ডার ভিত্তিতে নির্বাচনি ইশতেহার প্রস্তুত করবে দলটি।
এছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং মিত্র রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও বিএনপি আলোচনা শুরু করতে পারে।
সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের অভিযোগসহ নানাভাবে তৃণমূল নিয়ন্ত্রণে যখন বিএনপি হিমশিম খাচ্ছে, সে সময় এমন প্রচারণার সিদ্ধান্ত নিলো দলটি।
বৈঠকে জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা।
বৈঠকে বিএনপি নেতারা এসব দাবিকে 'অযৌক্তিক' ও 'অহেতুক সময়ক্ষেপণের কৌশল' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাদের বিশ্বাস, জামায়াতসহ কিছু দল সরকার ও বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তারা মনে করেন, এই প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবে, দলটির উদ্বেগ হলো জামায়াতের এই কর্মসূচি নির্বাচনি প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে। ফলে দেশে অস্থিরতা ও ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি কখনো ওঠেনি।
গতকাল গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধুমাত্র কয়েকটি সংসদীয় আসন নিশ্চিত করার জন্য পিআর পদ্ধতির দাবি করা জাতীয় স্বার্থবিরোধী। এটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা আমরা সমর্থন করি না।' তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।
নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো রাজনৈতিক কৌশল জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ তাদের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য ১৬-১৭ বছর ধরে সংগ্রাম করছে। কেবল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে রাজনৈতিক সরকার গঠনের মাধ্যমে এই অধিকার বাস্তবায়িত হবে।
লন্ডনে তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর বিএনপি নির্বাচনের ঘোষিত সময় নিয়ে আস্থা প্রকাশ করেছে। নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়ে তাদের কোনো সন্দেহ নেই।
সরকার ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে এবং কমিশন প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি এ প্রক্রিয়ায় তাদের আস্থা বজায় রাখার কথা জানিয়েছে।
সোমবারের বৈঠকে বিএনপি নেতারা আরও দাবি করেন, ডাকসু নির্বাচনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ গোপন আঁতাত করেছিল। তারা বলেন, ছাত্রলীগের সব ভোট চলে গেছে ছাত্রশিবিরের কাছে। দলীয় নেতারা ডাকসুতে ভরাডুবির কারণ হিসেবে পরিকল্পনার অভাব, গুরুত্বহীনতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন।
তারা জোর দিয়ে বলেন, এখন দলের কাঠামো পুনর্গঠন, সমন্বয় জোরদার ও কৌশলগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বিএনপির জরিপ
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপির হাইকমান্ড ৩০০টি নির্বাচনি এলাকায় জরিপ চালিয়ে বিতর্কমুক্ত, জনপ্রিয়, শিক্ষিত ও শক্তিশালী প্রার্থীদের তালিকা করেছে।
স্থায়ী কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয় তারেক রহমানকে।
জরিপ ও দলীয় বিবেচনায় উপযুক্ত ব্যক্তিদের প্রার্থী হিসেবে সবুজ সংকেত দেওয়ার পরামর্শও নেতারা দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তারা পরামর্শ দেন, যেকোনো অন্তঃকোন্দল শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা উচিত।
বিএনপি এই নির্বাচনে ১৫ থেকে ২০ জন নারীকে সরাসরি নির্বাচনে প্রার্থী করার বিষয়ে মনোনিবেশ করছে।#
পার্সটুডে/জিএআর/১৭