জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি প্রতিনিধির হুঁশিয়ারি
ইরান: গাজা সংক্রান্ত মার্কিন খসড়া প্রস্তাব ইসরায়েলকে রক্ষায় ব্যবহার করা উচিত নয়
-
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি
পার্স_টুডে: ইরান সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে গাজা উপত্যকায় বিদেশী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত সাম্প্রতিক মার্কিন-খসড়া প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনিদের অধিকার ক্ষুণ্ন করতে বা ইসরায়েলি সরকারকে জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা উচিত নয়।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক ও উপনিবেশমুক্তকরণ কমিটির (চতুর্থ কমিটি) এক অধিবেশনে এ সংস্থায় নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি এই মন্তব্য করেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন যে, যদিও নিরাপত্তা পরিষদের অনেক সদস্য ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা ও রক্তপাত বন্ধের আশায় এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন, তবুও এর প্রক্রিয়া জাতিসংঘের কর্তৃত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার এবং ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকারকে দুর্বল করার ঝুঁকি তৈরি করবে।
সোমবার পাস হওয়া এই প্রস্তাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনার আওতায় গাজায় "আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ)" গঠন ও মোতায়েনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় শুরু হওয়া উপকূলীয় অঞ্চলে ইসরায়েলি যুদ্ধের অবসান ঘটানো। এই যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক আদালতসহ বিশ্বের বেশিরভাগ জনগণ ও জনমত গণহত্যা হিসেবে দেখছে।
ইরাভানি জোর দিয়ে বলেন যে প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন যেন কোনোমতেই ফিলিস্তিনি অধিকার, বিশেষ করে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্র গঠন এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার অধিকার লঙ্ঘন না করে। গাজাকে 'ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ' হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এটি অবশ্যই একটি ফিলিস্তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত এবং একে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করা বা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানচ্যুত করা থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেন যে যুদ্ধ বন্ধ করা, যদিও অপরিহার্য কিন্তু যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় বাধ্যবাধকতা হিসেবে রয়ে গেছে। "গাজায় গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী এবং অপরাধীদের বিচার করতে হবে," বলে তিনি ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন "ইসরায়েলকে ঘিরে কয়েক দশক ধরে চলমান দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে।"
জাতিসংঘের যাচাইকৃত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ইরাভানি উল্লেখ করেছেন যে তেল আবিবের অনিয়ন্ত্রিত সামরিক আক্রমণের ফলে প্রায় ৭০,০০০ বেসামরিক নাগরিক, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে তেল আবিব আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে, একই সাথে গাজায় অনাহার, অবরোধ এবং পদ্ধতিগত তথা পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত গাজায় ইসরায়েল কর্তৃক অবরোধ, ত্রাণ-সাহায্যে বাধা এবং বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস ও "অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার" করাকে কেবল যুদ্ধাপরাধই নয়, একইসঙ্গে ফিলিস্তিনিদের অকাট্য অধিকারের উপর সরাসরি আক্রমণ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন