কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি, ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পাল্টা জবাব
ভারতের বিজেপিশাসিত কর্ণাটকের একটি কলেজে হিজাব পরিহিতা মুসলিম ছাত্রীকে দেখে হিন্দুত্ববাদী যুবকরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে উত্যক্ত করার সময় ছাত্রীটি পাল্টা জবাব দিলেন ‘আল্লাহু আকবর’ শ্লোগান দিয়ে। আজ (মঙ্গলবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, হিজাব পরা এক তরুণী তার স্কুটার রেখে কলেজ ভবনের দিকে এগোতেই ‘গেরুয়া চাদর’ পরা প্রচুর সংখ্যক যুবক 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দিতে দিতে তার দিকে ধেয়ে যায়। এ সময়ে মুসলিম ছাত্রীটিকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে 'আল্লাহু আকবর' বলে চিৎকার করতে দেখা যায়। এরপরে তিনি কলেজ ভবনের দিকে এগোলে ওই ‘গেরুয়া চাদর’ পরা হিন্দুত্ববাদী যুবকরা তাকে অনুসরণ করতে থাকে। ওই ছাত্রীকে এরপরে ক্যামেরার সামনে চিৎকার করে এই বিষয়ে অভিযোগ জানাতে দেখা যায়। কলেজ কর্তৃপক্ষের লোকজন ওই স্লোগান দেওয়া যুবকদের থামিয়ে দিয়ে, ওই ছাত্রীকে কলেজে যেতে বলেন।
এদিকে, রাজ্যটিতে বিভিন্ন স্থানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরিধান নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ওই ইস্যুতে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তিন দিনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিআর বোম্মাই এক বার্তায় বলেন, "আমি সমস্ত ছাত্র, শিক্ষক এবং স্কুল ও কলেজের ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি কর্ণাটকের জনগণকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আবেদন করছি। আমি আগামী তিন দিনের জন্য সব হাই স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।"
কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, "কর্নাটকের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে জাতীয় পতাকার বদলে ‘গেরুয়া পতাকা’ লাগানো হয়েছে। আমি মনে করি আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এক সপ্তাহ বন্ধ রাখা উচিত। পড়াশোনা অনলাইনে চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।"
সংসদেও হিজাব ইস্যু তুলেছেন কংগ্রেসের এক এমপি। কংগ্রেস এমপি পিএন প্রতাপ বলেন, কর্ণাটকের বিভিন্ন কলেজের ছাত্রীরা বাইরে বসে তাদের অধিকারের দাবি জানাচ্ছেন। হিজাব হিন্দু নারীদের জন্য যেমন মঙ্গলসূত্র, খ্রিস্টানদের জন্য ক্রস এবং শিখদের পাগড়ির মতোই মুসলিম নারীদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় পরিচয়।
এ সবের আগে গত জানুয়ারিতে কর্ণাটকের উদুপির একটি সরকারি কলেজে মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে আসায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষ থেকে ওই ছাত্রীদের হিজাব পরতে নিষেধ করলেও তারা হিজাব পরে ক্লাসে আসেন। এ সময়ে তাদেরকে ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এরপর থেকে রাজ্যে হিজাব নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় এবং অনেক জায়গায় তা পড়াশোনায় প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে, বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ালে আজ শুনানিতে আদালত সংবিধান অনুযায়ী চলবে বলে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে। আগামীকাল বুধবার ওই ইস্যুতে ফের শুনানি হবে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/০৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।