কর্ণাটকের পর এবার ভারতের মধ্য প্রদেশ ও পুদুচেরিতে হিজাব নিয়ে বিতর্ক
(last modified Wed, 09 Feb 2022 08:13:47 GMT )
ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২ ১৪:১৩ Asia/Dhaka
  • কর্ণাটকের পর এবার ভারতের মধ্য প্রদেশ ও পুদুচেরিতে হিজাব নিয়ে বিতর্ক

ভারতে বিজেপিশাসিত কর্ণাটকের পর এবার বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশ ও পুদুচেরিতে মুসলিম নারীদের শালীন পোশাক হিজাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।   

আজ (বুধবার) হিন্দি গণমাধ্যম ‘লোকমত নিউজ’ সূত্রে প্রকাশ, হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে মধ্য প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিং পারমার বলেছেন, ‘সরকার শৃঙ্খলাকে অগ্রাধিকার দেবে। হিজাব স্কুলের পোশাকের অংশ নয়, তাই স্কুলে এটি পরা নিষিদ্ধ করা উচিত। ঐতিহ্যগুলো লোকেদের তাদের বাড়িতে অনুসরণ করা উচিত, স্কুলে নয়। আমরা স্কুলগুলোতে ড্রেস কোড কঠোরভাবে প্রয়োগ করার জন্য কাজ করছি। ’  

রাজ্যের স্কুলগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ করা হবে কী না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  

আরও পড়ুন : কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি, ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পাল্টা জবাব

অন্যদিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র আব্বাস হাফিজ বলেছেন, মন্ত্রীকে তার অগ্রাধিকার কী তা আমাদের জানাতে হবে। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে স্কুলগুলোতে সঠিকভাবে কাজ করা এবং সরকারি স্কুলে শূন্য পদ পূরণ করা, না সাম্প্রদায়িক বিভাজনের এজেন্ডাকে আরও এগিয়ে নিয়ে শিক্ষার মান উন্নত করা?  

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে তার ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে, কিন্তু বিজেপি সরকার স্কুলগামী শিশুদেরও তাদের ধর্মীয় অনুশীলন থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে। শিখদের ‘পাগড়ি’ পরা এবং মুসলিম  নারীদের ‘হিজাব’ পরা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। কিন্তু এই সরকার বহু পুরোনো ঐতিহ্যের অবসান ঘটাতে চায়, যা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের মানসিক দেউলিয়াপনা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। ’ 

ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি এমপি

ভারতের মজলিশ-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি এমপি ওই ইস্যুতে বলেছেন, ‘আমি প্রার্থনা করি যে আমাদের বোনেরা হিজাব পরার অধিকারের জন্য লড়াই করছে তাদের এই লড়াই সফল হোক। কর্ণাটকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫, ১৯ এবং ২১ গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আমি কর্ণাটকের ভারতীয় বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি।’ 

এ দিকে, পুদুচেরির শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা ছাত্রদের গোষ্ঠী এবং অন্যান্য সংগঠনের কাছ থেকে একজন শিক্ষক সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছেন যিনি একজন ছাত্রীর মাথায় স্কার্ফ পরা নিয়ে আপত্তি করেছিলেন। আমরা জানতে চাই ঠিক কী ঘটেছে এবং স্কুল থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।  

বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ভারতের স্টুডেন্টস ফেডারেশনের স্থানীয় প্রধান বলেছেন, মেয়েটি গত তিন বছর ধরে হিজাব পরে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে এবং এখন কেন আপত্তি তোলা হচ্ছে? তিনি বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন যে ভিরামপট্টিনাম, এমবালাম এবং তিরুকানুরের কিছু স্কুল বিজেপির একটি আদর্শিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কর্মসূচির মতো অনুশীলনকে  উৎসাহিত  করছে।   

কর্ণাটক হিজাব বিতর্কে রাজ্যসভার বিরোধী দলের নেতা ও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ভোটের মেরুকরণের জন্য এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। কিছু লোক হিন্দু-মুসলিম সংঘাত বাধানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কর্ণাটক সবসময়ই ঐক্যবদ্ধ। এর পেছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কাজ করছে।  

প্রিয়াঙ্কা গান্ধি

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি কর্ণাটকে হিজাব বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেছেন, আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাগত অধিকার সমান। সেজন্য হিজাব নিয়ে কোনো ধরণের হট্টগোল ঠিক নয়। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ড্রেস কোড আছে, সেগুলোতে সাম্প্রদায়িক পেরেক ঠুকবেন না।

ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, ‘বিকিনি হোক, ঘোমটা হোক, জিনস হোক বা হিজাব হোক; তিনি কী পরতে চান, তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একজন নারীর। এই অধিকার ভারতীয় সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীদের হয়রানি বন্ধ করুন।’

এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জেসমিন আখতার আজ (বুধবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌, আমি নিজে হিজাব পালন করি। হিজাব পালন ইসলাম ধর্মে ফরয করা হয়েছে প্রতিটা মেয়ের জন্যে। হিজাব হলো প্রতিটা মেয়ের রক্ষাকবচ। একটা উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, একটা চকলেট যদি প্যাকেট থেকে খোলা রাখা হয় তাহলে পিপঁড়া লাগে, কিন্তু প্যাকেটে মোড়া থাকলে পিপঁড়া লাগতে পারে না। ঠিক তেমনভাবেই হিজাব পরিহিতা মেয়েরা বেশি সুরক্ষিত।’   

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতর্ষে বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। সর্বোপরি ভারত যেহুতু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলতে গেলে কোনো ধর্মকেই হেনস্থা করা ঠিক নয়। প্রত্যেকটা ধর্মের নিজস্ব কিছু নিয়ম নীতি আছে যেগুলো মেনে চলার স্বাধীনতা প্রত্যেককেই দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।  হিজাব আমাদের সুরক্ষিত করে। এবার অনেকেই হয়তো বলবে সেটা আবার কীভাবে? আসলে,  যে সকল দেশে হিজাবের প্রচলন রয়েছে সেই দেশ গুলোর তুলনায় ভারতে ধর্ষণের হার দেখলেই সেটা স্পষ্ট হবে। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধানের ২৫ ধারায় রাষ্ট্রের সকল মানুষকে সমানভাবে তার বিবেকের স্বাধীনতা অনুসারে ধর্ম গ্রহণ, ধর্মপ্রচার, ধর্মাচরণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। হিজাব পরতে বাধা দেওয়া মানে হলো 'ব্যাক্তি স্বাধীনতা'কে আঘাত হানা- যেটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এ দিকে, হিজাব নিয়ে কর্ণাটকে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তার ঢেউ অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। তেলেঙ্গানায় হিজাব নিয়ে বিতর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। হায়দরাবাদে মুসলিম ছাত্রী ও নারীরা ওই ইস্যুতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।   

হিজাব ইস্যুতে নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, ‘পড়াশোনা এবং হিজাবের মধ্যে কোনও একটা বেছে নিতে আমাদের বাধ্য করছে কলেজ। হিজাব পরে মেয়েদের স্কুলে যেতে নিষেধ করার বিষয়টি ভয়াবহ। খোলামেলা পোশাক হোক বা ঢাকা পোশাক- নারীদের অবজেক্টিফিকেশনের ধারা অব্যাহত আছে। ভারতীয় নেতাদের অবশ্যই মুসলিম নারীদের প্রান্তিককরণ বন্ধ করতে হবে।’ 

নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই

মালালার এ ধরণের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন কর্ণাটকের বিজেপি নেতা সিটি রবি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, মালালা কীভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে পারেন?  

বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া ইনচার্জ অমিত মালব্য বলেছেন, কুরআনের প্রথম শব্দ ‘ইকরা’ যার অর্থ অধ্যয়ন, কিন্তু কর্ণাটকে আমরা যা দেখছি তা মোটেও জ্ঞানের  সন্ধান নয়। তাঁর অভিযোগ, এটা শিক্ষা ছাড়া সবকিছু। ধর্মের নামে মেয়েদের শিক্ষার বদলে হিজাব বেছে নিতে বলা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।#        

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ