কর্ণাটকে হিজাব বিতর্কে কলেজ থেকে ফেরত পাঠানো হল ছাত্রীদের
(last modified Wed, 16 Feb 2022 12:11:28 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২ ১৮:১১ Asia/Dhaka
  • কর্ণাটকে হিজাব বিতর্কে কলেজ থেকে ফেরত পাঠানো হল ছাত্রীদের
    কর্ণাটকে হিজাব বিতর্কে কলেজ থেকে ফেরত পাঠানো হল ছাত্রীদের

ভারতের বিজেপিশাসিত কর্ণাটকে এবার অন্য একটি সরকারি কলেজে হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আজ (বুধবার) এনডিটিভি হিন্দি ওয়েবসাইটে প্রকাশ, সরকারি কলেজটি ওই ছাত্রীদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে যারা ক্লাসরুমে হিজাব পরার জন্য জোর দিয়েছিল।

উত্তর কর্ণাটকের বিজয়পুরার সরকারি পিইউ কলেজে আগে হিজাব পরার অনুমতি ছিল, কিন্তু আজ (বুধবার) তারা ছাত্রীদের ক্লাসরুমে হিজাব পরতে দেয়নি। কলেজ প্রশাসন সাফাইতে বলেছে, তারা শুধুমাত্র হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশ অনুসরণ করছে, যেখানে স্কুল-কলেজ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এই শর্তে যে শ্রেণীকক্ষে ধর্মীয় পোশাক পরার অনুমতি দেওয়া হবে না। কিন্তু, ছাত্রীদের মতে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়নি যে হিজাব বা বোরকা পরার অনুমতি দেওয়া হবে না।  

কলেজ থেকে প্রাপ্ত ছবিতে প্রকাশ যে, যেসব ছাত্রী হিজাব এবং বোরকা পরে ক্লাসে প্রবেশ করেছিল, তারা শিক্ষকের সাথে তর্ক করছেন এবং স্কুলের অধ্যক্ষ তাদের আদালতের আদেশ মানতে অনুরোধ করছেন। অধ্যক্ষ বলেন, আমরা হাইকোর্টের আদেশ মেনে চলছি। ওই ইস্যুতে তর্ক-বিতর্কের পরে এসব ছাত্রীকে কলেজের ভেতরে একটি জায়গায় হিজাব ও বোরকা খুলে রেখে ক্লাসরুমে যেতে দেওয়া হয়। কলেজের প্রবেশমুখেই অধ্যক্ষ এসব ছাত্রীকে বাধা দিলেও তারা জোর করে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদ জানান। এ সময়ে তাদের চলে যেতে বলা হলে ছাত্রীরা 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগান তুলে বিক্ষোভ করে এবং সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমের সামনে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। 

এরআগে কর্ণাটকের উডুপির এক সরকারি কলেজে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন ছাত্রীরা। ওই ইস্যুতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হন ছাত্রীদের একাংশ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কর্নাটক হাই কোর্ট অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশে জানায়, আপাতত কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও ধর্মীয় পোশাক পরে যাওয়া যাবে না।

‘হিজাব’ বিতর্ক প্রসঙ্গে আজ (বুধবার) পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ হাউসিং-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শামিমা খাতুন রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘হিজাব নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, শিক্ষার্থীদের হিজাব পরে ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, সেজন্য আমি কর্ণাটক সরকারকে ধিক্কার জানাই। আমি মনে করি কে কী পরিধান করবে, কে কী খাবে সেজন্য কারও কাছ থেকে আমাদের অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই। কারণ, সংবিধানে আমাদের ওই বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের মৌলিক অধিকারের খাওয়ার স্বাধীনতা, পরার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে আমাদের অধিকার দেওয়া হলেও যারা বিরোধিতা করছেন তাদের হিজাব নিয়ে এত সমস্যা কেন? আসলে হিজাবকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে চাচ্ছেন কিছু রাজনৈতিক দল। তারা বিশেষ করে মুসলিমদের টার্গেট করছে এবং আমাদের দেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ তাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে চাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত, ইন্ডিয়াকে ভারত বলে গণ্য করা হয়েছে, ভারত বলেই বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানের কিছু রাজনৈতিক দল আছে যারা ভারত নামকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে এবং তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ইন্ডিয়া বা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিবর্তন করার জন্য। ভারতের মতো দেশকে তারা একেবারেই অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে। তারা এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের একাংশের সাহায্যে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এবং হিজাব ইস্যুতে তারা ভুল তথ্য দিতে চাচ্ছেন। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের নাম হল ভারত। সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করেন, এখানে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ, বিভিন্ন পেশা ও সংস্কৃতির মানুষ রয়েছেন। সেজন্য সকলেই আসুন আমরা সবাই মিলে এই বৈচিত্রকে অক্ষুণ্ণ রাখি এবং সুন্দর উজ্জ্বল ভারত গঠনের স্বপ্ন দেখি।’

মুসলিমদের দমিয়ে রাখার জন্য হিজাব ইস্যু আসলে রাজনৈতিক প্রচারণা বলেও মন্তব্য করেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শামিমা খাতুন।# 

পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ