মুসলিম নেতাদের প্রতিক্রিয়া
মুসলিম নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলন নয়: কর্নাটক হাইকোর্ট
মুসলিম নারীদের ‘হিজাব’ পরা বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলন নয় বলে রায় দিল কর্নাটক হাইকোর্ট। আজ (মঙ্গলবার) হাইকোর্ট এ সংক্রান্ত রায় দিয়েছে। এর ফলে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে হাই কোর্টে দায়ের হওয়া সমস্ত আবেদন খারিজ হয়ে গেল। এবং হাই কোর্টে জয় হল রাজ্য সরকারের।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন হিজাবের সমর্থনে আন্দোলনরত মুসলিম শিক্ষার্থীরা। এ দিকে, আদালতের রায়ের পর ওই ইস্যুতে প্রতিবাদও শুরু হয়েছে। হিন্দি গণমাধ্যম ‘দৈনিক ভাস্কর’ জানিয়েছে, কর্ণাটকের ইয়াদগিরের একটি সরকারি কলেজে ৩৫ জন ছাত্রী পরীক্ষা বয়কট করেছে। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তাদের বুঝিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ পালন করতে বললেও শিক্ষার্থীরা তাতে রাজি না হয়ে পরীক্ষার হল ত্যাগ করেন।
হিজাব বিতর্কে কর্ণাটক হাইকোর্টের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি। তিনি বলেন, আমরা ওই সিদ্ধান্তের সাথে একমত নই এবং এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘এটা সংবিধানের ১৫ ধারা লঙ্ঘন। এবং সংবিধানের প্রস্তাবনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতের সকল নাগরিকের চিন্তা, মত প্রকাশ, বিশ্বাস এবং উপাসনার স্বাধীনতার কথা আছে। এজন্য আমরা মনে করছি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হবে। কর্ণাটকে ‘মিম’ পার্টির যে নেতা আছেন তাকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে বলব। এবং এর আরও একটি নেতিবাচক প্রভাব হবে যে জায়গায় মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করা হবে।’
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি প্রধান মেহেবুবা মুফতি বলেছেন, ‘হিজাব নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার কর্ণাটক হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হতাশাজনক! একদিকে আমরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও অন্যদিকে, তাদের একটি সাধারণ অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি। এটি কেবল ধর্মের বিষয় নয়, পছন্দের স্বাধীনতারও বিষয়।’
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘হিজাব নিয়ে আপনি যাই ভাবুন না কেন, এটা পোশাক নয়, এটা নারীর অধিকারের কথা। আদালত এই মৌলিক অধিকারকে বহাল রাখেনি, এটা হাস্যকর।’
আদালতের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেসের বিধায়ক ইরফান আনসারি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ঝাড়খন্ড বিধানসভা ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিধায়ক ইরফান আনসারি বলেন, ‘আমি আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে, মনে হচ্ছে বিজেপি এখন আদালতও চালাচ্ছে। এটা একটি খারাপ নজির স্থাপন করছে।’
হিজাব সমর্থক শিক্ষার্থীদের আইনজীবী বলেছেন, তাদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের ওই সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হবে। অ্যাডভোকেট আনাস তানভীর বলেছেন, 'হিজাব বিতর্ক নিয়ে উডুপিতে আমার ক্লায়েন্টদের সাথে দেখা করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা শিগগিরি সুপ্রিম কোর্টে যাব। আশা করি এই ছাত্রীরা তাদের হিজাব পরার অধিকার নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। আদালত ও সংবিধানের ওপরে এখনো ওই ছাত্রীদের আশা আছে।
আজ কর্ণাটক হাইকোর্ট হিজাবের সমর্থনে মুসলিম মেয়েদের সহ অন্য ব্যক্তিদের করা ৮টি পিটিশনের সবকটি খারিজ করে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিত এবং বিচারপতি খাজি জয়বুন্নেসা মহিউদ্দিন সমন্বিত ৩ সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্য সরকারের গত ৫ ফেব্রুয়ারির আদেশকে বাতিল করতে অস্বীকার করেন যাতে স্কুল ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
বিজেপিশাসিত কর্ণাটক রাজ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরিধানে অনড় মনোভাব নিয়ে তারা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
এদিকে, হিজাব বিতর্ক মামলায় আদালতের সিদ্ধান্তের পর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোম্মাই বলেছেন, ওই রায়কে সবার স্বাগত জানানো উচিত। কেউ রাজ্যে শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পার্সটুডে/এমএএইচ/বাবুল আখতার/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।