জম্মু-কাশ্মীরে ডিলিমিটেশন নিয়ে ‘ওআইসি’র মন্তব্য খারিজ করল ভারত
ভারত জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচনী সীমানা পুনর্বিন্যাস বা ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ার বিষয়ে অযাচিত মন্তব্যের জন্য অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর সমালোচনা করেছে এবং একটি দেশের প্ররোচনায় ‘সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা’ চালানো থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
এনডিটিভি হিন্দি ওয়েবসাইট সূত্রে প্রকাশ, ভারতের এই কড়া প্রতিক্রিয়া এমন এক সময়ে এসেছে যখন ‘ওআইসি’ জম্মু-কাশ্মীরে ডিলিমিটেশনের জন্য ভারত সরকারের সমালোচনা করেছে। সোমবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘আমরা বিস্মিত যে ‘ওআইসি’ আবারও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য করেছে।’
তিনি বলেন, অতীতেও, ভারত সরকার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে ‘ওআইসি’র বিবৃতিকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তিনি বলেন, জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনো দেশের নাম না করে অরিন্দম আরও বাগচি বলেন, ‘ওআইসি’কে একটি দেশের প্ররোচনায় ভারতে তার ‘সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা’ চালানো থেকে বিরত থাকা উচিত।
আজ (মঙ্গলবার) হিন্দি গণমাধ্যম ‘দৈনিক ভাস্কর’ সূত্রে প্রকাশ, গত (সোমবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্যুইট করে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচনী সীমানা পুনর্বিন্যাসে আপত্তি তুলেছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের এই প্রচেষ্টা জম্মু-কাশ্মীরের জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তন এবং কাশ্মীরি জনগণের অধিকার লঙ্ঘন। তারা বলেছে- এই সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনসহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচনী সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে পাকিস্তানের সংসদে পাস হওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। শুধু তাই নয়, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে কড়া ভর্ৎসনাও করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই।
‘আজতক’ হিন্দি গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, ‘আমরা জম্মু-কাশ্মীরের সীমানা পুনর্বিন্যাস বিষয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে পাস করা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। পাকিস্তানের দখলকৃত ভূখণ্ডসহ সমগ্র ভারতীয় ভূখণ্ডের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার পাকিস্তানের নেই।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ সবসময় ভারতের অভ্যন্তরীণ অংশ ছিল এবং থাকবে। জম্মু-কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ডিলিমিটেশন ব্যাপক আলোচনা এবং অংশগ্রহণের নীতির ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রক তার বিবৃতিতে বলেছে, এটা দুঃখজনক যে পাকিস্তানের নেতৃত্ব তার ঘর সংগঠিত করার পরিবর্তে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে চলেছে এবং ভিত্তিহীন ও ভারত বিরোধী প্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা পাকিস্তানকে অবিলম্বে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করতে এবং সন্ত্রাসের অবকাঠামো বন্ধ করতে বলছি। এছাড়াও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করুক এবং অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখলকৃত ভারতীয় অঞ্চলগুলো খালি করে দিক।
সীমানা পুনর্বিন্যাস কমিশন গত ২৫ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভার ৭টি আসন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। এরপরে, জম্মু-কাশ্মীরে মোট ৯০টি বিধানসভা আসন হবে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সীমানা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপর পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদে এর বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস হয়। ভারত ওই প্রস্তাব কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা করেছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।