মহানবীকে অবমাননা ইস্যু: রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান ত্বহা সিদ্দিকীর, মমতার হুঁশিয়ারি
https://parstoday.ir/bn/news/india-i109102-মহানবীকে_অবমাননা_ইস্যু_রাজ্যে_শান্তি_বজায়_রাখার_আহ্বান_ত্বহা_সিদ্দিকীর_মমতার_হুঁশিয়ারি
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে গত (বৃহস্পতিবার) ও (শুক্রবার) পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষিপ্ত সহিংস ঘটনা ঘটেছে তা বন্ধ করাসহ শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানালেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি। শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীও।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
জুন ১১, ২০২২ ১৯:২৬ Asia/Dhaka

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে গত (বৃহস্পতিবার) ও (শুক্রবার) পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষিপ্ত সহিংস ঘটনা ঘটেছে তা বন্ধ করাসহ শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানালেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি। শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীও।

পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি হিন্দুত্ববাদী বিজেপিকে টার্গেট করে বলেন, ‘এটা আমাদের লজ্জা! ভারতবর্ষের মানুষ আমরা হিন্দু-মুসলমান গর্ব করতাম, মাথা উঁচু করে বলতাম আমরা হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে বাস করি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, কিছু চ্যাংড়া ছেলেমেয়ে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছে তাদেরকে আপানারা  গ্রেপ্তার করুন। নূপুর শর্মা যে কাজটা করেছে, সেজন্য তাকে কেন গ্রেপ্তার করা  হয়নি? তাকে অ্যারেস্ট করা হয়নি বলেই সারা দেশের মানুষ ও পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারছে এর পিছনে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের সমর্থন আছে।’

তিনি অবরোধ প্রসঙ্গে বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এঁর জন্য আমি ত্বহা সিদ্দিকী এক সেকেন্ডের মধ্যে নিজের জীবনটাকে কুরবানি করে দিতে পারি এবং দেবো। কিন্তু এটা নয় যে, হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে সামনে রেখে আপনারা বাংলায় একটা বিশৃঙ্খলা করবেন। আপনারা পথ অবরোধ করে মিছিল করছেন। আপনাদের জানা নেই ওই মিছিলের মধ্যে কিছু ‘আরএসএস ও বিজেপি’র ছেলে পাঞ্জাবি, টুপি পরে  তারা পাথর ছুঁড়তে শুরু করবে এরফলে বদনাম হবে মুসলিমদের। আমি পীরের আওলাদ হয়ে আপনাদের কাছে করজোড়ে আবেদন করছি, পায়ে ধরে আবেদন করছি, আপনারা এমন কাজ করবেন না যাতে মুসলমান কওমের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলতে পারে।’ 

অন্যদিকে, বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী আজ এক বার্তায় বলেছেন, ‘বিগত দুই দিন বেশ কিছু জায়গায় আন্দোলনের নামে যে ঘটনা ঘটেছে তা মোটেও কাম্য নয়। আন্দোলনের  নামে বিশৃঙ্খলাকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। এটা একটা চক্রান্ত চলছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তথা মুসলিমদেরকে বদনাম করার জন্য। আমি অনুরোধ করবো কেউ চক্রান্তে পা দেবেন না। গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সমস্ত শান্তি প্রিয় মানুষদের সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। সংবিধানসম্মতভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করা উচিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৌহার্দ্য ভালোবাসা বজায় রেখে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত বলে মনে করি।’   

বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ (সঃ) একজন আদর্শ মহামানব। তিনি সদাসর্বদা শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে ছিলেন এবং ফিতনা ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। বাংলার শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের বাংলার ঐতিহ্য সম্প্রীতি ঐক্য কোনোভাবে যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সজাগ থাকতে হবে। আমি আশা করব বিগত দুইদিন ধরে বেশ কিছু জায়গায় যে ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটেছে আগামীতে তা ঘটবে না। আইন হাতে তুলে নেবেন না সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখবেন। আপনাদের কাছে আবারও  অনুরোধ করব যদি আপনাদের এলাকায় দেখতে পান কোনোরকম কোনো ধরনের অপ্রীতিকর-বিশৃঙ্খলা ঘটাতে চাইছে কেউ বা কারা, সেই খবরটা তাৎক্ষণিকভাবে  স্থানীয় প্রশাসনকে জানান এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলুন।’      

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি

অন্যদিকে, আজ (শনিবার) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন, ‘আগেও বলেছি, দু’দিন ধরে হাওড়ার  জনজীবন স্তব্ধ করে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে । এর পিছনে কিছু রাজনৈতিক দল আছে এবং তারা দাঙ্গা করাতে চায়- কিন্তু এ সব বরদাশত করা হবে না এবং এ সবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে। পাপ করল বিজেপি, কষ্ট করবে জনগণ?’  

বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে গত দু’দিন ধরে কার্যত অগ্নিগর্ভ হাওড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা। অশান্তি ঠেকাতে ইতোমধ্যেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে। আজ শনিবার সকালে উলুবেড়িয়া মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আগামী ১৫ জুন অর্থাৎ বুধবার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ জনের বেশি জমায়েতের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কেউ নিয়ম ভাঙলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী (সোমবার) পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’। 

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধের পরেও গত দু’দিন ধরে বিক্ষোভ-অবরোধ চলছে হাওড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায়। আজ শনিবার সকালেও অশান্তি ছড়ায় হাওড়ার পাঁচলায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অশান্তি ঠেকাতে আরও কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছেন।#

পার্সটুডে/এম এ এইচ/গাজী আবদুর রশীদ/১১