জনসংখ্যা ইস্যুতে উত্তপ্ত উত্তরপ্রদেশে
জনসংখ্যা ইস্যুতে যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্যের সমালোচনায় ওয়াইসি
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির ফায়ারব্রান্ড নেতা যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ অব্যাহত রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সমালোচনা করেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব ও অন্যরা। সোমবার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি নাম না করে মুসলিমদের টার্গেট করে বলেন, ‘এটা যেন না হয় যে কোনো এক শ্রেণির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হবে এবং যারা মূলনিবাসী, তাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আদিত্যনাথ বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা সফল হোক। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, কোথাও যেন জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতার পরিস্থিতি তৈরি না হয়। তিনি বলেন, যেসব দেশে জনসংখ্যাগত ভারসাম্যহীনতা রয়েছে সেখানে উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়, কারণ এরফলে ধর্মীয় জনবিন্যাসে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ কারণে সেখানে এক সময় বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা জন্ম নিতে থাকে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্যের পাল্টা জবাবে অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, ‘মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি গর্ভনিরোধক ব্যবহার করে। ২০১৬ সালে মুসলমানদের এফটিআর অর্থাৎ উর্বরতা হার ছিল ২.৬। এখন তা ২.৩-এ নেমে এসেছে। দেশের জনসংখ্যাগত ভারসাম্য অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো।’ ওয়াইসি প্রশ্ন করেছেন ‘মুসলিমরা কী ভারতের আদি বাসিন্দা নয়? যদি আমরা সত্যের দিকে তাকাই, তাহলে শুধুমাত্র জনজাতি অর্থাৎ উপজাতি এবং দ্রাবিড়রাই মূল নিবাসী। উত্তর প্রদেশ কোনো আইন ছাড়াই ২০২৬ থেকে ২০৩০-এর মধ্যে লক্ষিত উর্বরতা হার অর্জন করবে।
এ প্রসঙ্গে সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেছেন, জনসংখ্যা থেকে নৈরাজ্যের উদ্ভব হয় না, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস থেকে এটি হয়।
সমাজবাদী পার্টির এমপি শফিকুর রহমান বার্ক বলেছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন না করে বিজেপি সরকারের উচিত মুসলমানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। শিশুরা যখন সুশিক্ষা পাবে, তখন মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা আপনা থেকেই শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচন নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে কেন্দ্র করে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে নির্দিষ্ট একাংশের ভোট বিজেপি পেতে পারে। সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘যোগীর বক্তব্য উত্তর প্রদেশের মুসলমানদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য। সরকার কখনো মুসলমানদের জনসংখ্যা কমানোর কথা বলে, কখনো বা জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মুসলমানদের দায়ী করে। দেশের বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতিসহ মৌলিক বিষয়গুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে বিজেপি নেতারা ভুল বক্তব্য দিচ্ছেন’ বলেও মন্তব্য করেন সমাজবাদী পার্টির এমপি শফিকুর রহমান বার্ক।
গত এপ্রিলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সরকারের চাপে বাধ্য হয়ে আরএসএস ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা রাকেশ সিন্হা তার আনা ‘জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০১৯’ প্রত্যাহার করে নেন।
রাজ্যসভার ওই এমপি’র আনা বিলটি ছিল প্রাইভেট মেম্বার বিল বা বেসরকারি বিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া সে সময়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই মুহূর্তে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কোনও বিল আনার কথা ভাবছে না সরকার। কিন্তু এ বার সেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের পক্ষেই সাফাই দিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ফায়ারব্রান্ড নেতা যোগী আদিত্যনাথ।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/১৩