মণিপুরে জঙ্গিদের গুলিতে পুলিশ কমান্ডো নিহত, রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি কংগ্রেসের
ভারতের মণিপুরে সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিদের গুলিবর্ষণে হেইশনাম জিতেন নামে পুলিশ কমান্ডো নিহত হয়েছে। ওই হামলার ঘটনায় আরও চার পুলিশকর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতাকে কেন্দ্র করে রাজ্যটিতে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিষ্ণুপুর জেলার ট্রোংলাওবি এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য গুলিবর্ষণ করলে পুলিশ সদস্যরা হতাহত হয়। গত (বুধবার) পূর্ব ইম্ফলে অসম রাইফেলেসের টহলদার বাহিনীর উপরে গুলিবর্ষণের ফলে এক জওয়ান আহত হয়েছিল। এ নিয়ে রাজ্যটিতে সরকারিভাবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৭। নিখোঁজ রয়েছে দু’জন। বেসরকারিভাবে অবশ্য হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি।
মণিপুরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। মণিপুর, মিজোরাম ও বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা ভক্ত চরণ দাস দিল্লিতে বলেন, ‘মণিপুরে পুরোপুরি অরাজকতা চলছে। রাজ্যের প্রকৃত ছবি যাতে বাইরে আসতে না পারে, সেজন্য ইন্টারনেট বন্ধ। এত বড় সহিংসতার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চুপ কেন? কেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখনও মণিপুরে আসেননি?’
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবিলম্বে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ঘরছাড়াদের নিরাপত্তা ও ঘরে ফেরানোর মতো সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা, নিহতদের পরিবারের জন্য ২০ লাখ ও ঘর পোড়া পরিবারগুলোর জন্য ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য দীর্ঘকালীন পুনর্বাসন প্যাকেজের দাবি জানানো হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা ভক্ত চরণ দাস বলেন, ‘মণিপুরে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। এছাড়া ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২০ হাজার মানুষকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কয়েক হাজার ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে, রাজ্যের ১৫/২০টি থানা থেকে একে-৪৭সহ অনেক অস্ত্র লুট করা হয়েছে। রাজ্যের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।’ গোটা সহিংসতা পরিকল্পিত এবং রাজ্য সরকার এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেতা ভক্ত চরণ দাস।
মণিপুরের ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়কে ‘তফশিলি উপজাতি’ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার দাবির বিরোধিতা করে গত ৩ মে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। 'অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মণিপুর' আয়োজিত 'উপজাতি সংহতি মার্চ'-এর পরে রাজ্যে উপজাতি ও অ-উপজাতির মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে আজ (শুক্রবার) ছত্তিশগড়ের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার আনন্দ মোহন বাইন রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘একটা কথা হচ্ছে, আমরা সাধারণ মানুষ। এবং সাধারণ মানুষরা সবসময়ে শান্তি চায়। তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে লড়াই ঝগড়া কখনও পছন্দ করে না। ওখানে জনসংখ্যা কত কম। এতগুলো লোক গৃহহীন হয়ে গেছে। এটা যদি স্যত্তে না আসে তাহলে ওখানে রাষ্ট্রপতি শাসন কার্যকর করা ঠিক। অন্তত লোকগুলো যে আশঙ্কায় আছে তা থেকে মুক্তি পাবে।’ রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু করা হোক যেন সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে, তাদেরকে গৃহহীন না হতে হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের খুব প্রয়োজন।’ #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএআর/১২