মণিপুরে ফের সহিংসতায় পুলিশ সদস্যসহ নিহত ৫, যৌথবাহিনীর অভিযানে খতম ৪০ জঙ্গি
https://parstoday.ir/bn/news/india-i123742-মণিপুরে_ফের_সহিংসতায়_পুলিশ_সদস্যসহ_নিহত_৫_যৌথবাহিনীর_অভিযানে_খতম_৪০_জঙ্গি
ভারতে বিজেপিশাসিত মণিপুরে নয়া সহিংসতায় একজন পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। একইসঙ্গে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কমপক্ষে ৪০ জন জঙ্গি মারা গেছে।
(last modified 2025-09-29T12:37:45+00:00 )
মে ২৯, ২০২৩ ১৩:২০ Asia/Dhaka
  • মণিপুরে ফের সহিংসতায় পুলিশ সদস্যসহ নিহত ৫, যৌথবাহিনীর অভিযানে খতম ৪০ জঙ্গি

ভারতে বিজেপিশাসিত মণিপুরে নয়া সহিংসতায় একজন পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। একইসঙ্গে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কমপক্ষে ৪০ জন জঙ্গি মারা গেছে।

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার এখানে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। এছাড়া আগামী ৩১ মে পর্যন্ত রাজ্যে অশান্ত এলাকায় ইন্টারনেটে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অনেক জেলায় এখনও কারফিউ জারি রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আজ (সোমবার) মানবাধিকার সংস্থা ‘বন্দি মুক্তি কমিটি’র সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ভানু সরকার রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘মণিপুরে বিজেপি যাদের সঙ্গে কাজ করেছে এবং তারা ভোটের আগে যে অভিযোগগুলো এনেছিল, বিজেপি যেটা আনে যে সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে, বক্তব্যেও বলেছে এবং পরবর্তীতে তাদের সঙ্গেই সরকার গড়েছে। এসব চাপা দেওয়াসহ দেশ জুড়ে নিজেদের যে ব্যর্থতা তাকে চাপা দেওয়ার জন্য নর্থ-ইস্টে তারা নতুন করে এসব করছে। ভালো করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে ‘মেইতেই’দের সংগঠিত করেছে  ‘আরএসএস’ এবং কুকিকের মধ্যেও একাংশকে সংগঠিত করেছে ‘আরএসএস’। তারাই এই গোটা অঞ্চলে এসব করে বেড়াচ্ছে। এখানে তো কোনও মুসলিম নেই। এখানে খ্রিস্টানদের সঙ্গে হিন্দুদের ঝামেলা, এবং এরা দাঙ্গা বাধিয়ে দিচ্ছে। মণিপুরে ভয়ঙ্কর ‘আফস্পা’ অ্যাক্ট চালু আছে, কিছু জায়গায় তুলেছে, কিছু কিছু জায়গায় আছে। সম্ভবত আবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের আশঙ্কা গোটা মণিপুর জুড়ে আবার সেনা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ (‘আফস্পা’)চালু করবে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘যারা উচ্ছেদ হয়েছে অবিলম্বে তাদের নিরাপত্তা দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের জীবন সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। প্রত্যেকটা ধর্মস্থান রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। প্রত্যেকটা চার্চ রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী চলতে পারবে। কিন্তু সেখানে চার্চে আগুন দেওয়া হচ্ছে, আক্রমণ হচ্ছে, ভাঙা হচ্ছে। এ সবের দায় কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের’ বলেও মন্তব্য করেন ‘বন্দি মুক্তি কমিটি’র সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ভানু সরকার।

ভানু সরকার

এদিকে, আজ রাজ্যটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সফরে আসবেন। অন্যদিকে, তার সফরের আগেই গতকাল (রোববার) রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ফের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই সহিংসতায় একজন পুলিশসহ কমপক্ষে পাঁচজন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন। 

মণিপুরে গত ৩ মে থেকে শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধার জন্য  ‘মেইতেই’দের তপশিলি উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার প্রচেষ্টা হলে ‘কুকি’ ও ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সহিংসতা চলছে। সহিংস ঘটনায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। কমপক্ষে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ অন্যত্র পালিয়ে গেছে।

ইম্ফল উপত্যকা অঞ্চলে ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়ের প্রভাব রয়েছে। এরা বেশিরভাগই হিন্দু। মণিপুরের মোট জনসংখ্যায় তাদের অংশ প্রায় ৫৩ শতাংশ। মণিপুরের মোট ৬০ জন বিধায়কের মধ্যে ৪০ জন বিধায়ক ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়ের। পাহাড়ি  এলাকায় ৩৩টি স্বীকৃত উপজাতির বাস, যাদের মধ্যে প্রধানত ‘নাগা’ এবং ‘কুকি’ উপজাতির। এই দু’টি উপজাতিই প্রধানত খ্রিস্টান। মণিপুরের মোট ৬০ জন  বিধায়কের মধ্যে ২০জন বিধায়ক উপজাতির। এছাড়া সেখানে প্রায় ৮ শতাংশ মুসলমান এবং প্রায় ৮ শতাংশ সানমাহি সম্প্রদায় রয়েছে।

‘মেইতেই’ সম্প্রদায়ের মানুষজন গত এক দশক ধরে উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। মেইতেইদের উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার দাবির প্রতিবাদে ৩ মে ইম্ফলে এক বিরাট মিছিল বের করেছিল ‘কুকি’রা। সেই মিছিলকে কেন্দ্র করেই রক্তাক্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয়পক্ষ। তারপর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে  ওই রাজ্য। ২৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে গোলযোগপূর্ণ এলাকায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিসেবা। রয়েছে অন্যান্য বিধি নিষেধও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত (শনিবার) উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে আসেন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে। কিন্তু গতকাল (রোববার) রাজ্যের পাঁচ জায়গায় হামলা চালায় অজ্ঞাত জঙ্গিরা। আর তারপরই জঙ্গিদমনে অভিযান শুরু করে সেনা-আধা সেনা ও পুলিশ সদস্য সমন্বিত যৌথবাহিনী। আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা অভিযানে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় কমপক্ষে ৪০ কুকি জঙ্গি। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর সফল অভিযানের খবর দেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছিল জঙ্গিরা। বেশ কিছু গ্রামে ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এম-১৬ ও একে-৪৭, স্নাইপারসহ নানা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছিল। কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। খতম করা হয়েছে প্রায় ৪০ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে।’     

রাজ্যটিতে চলমান অশান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রচুর পরিমাণে সেনা ও আধা সেনা জওয়ান মোতায়েন রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর বাদে বিগত বহু বছরে কোনও রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এত বিপুল সংখ্যায় সেনা মোতায়েন করতে হয়নি। একইসঙ্গে কাশ্মীর ছাড়া আর কোথাও অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে বিগত বহু বছরের মধ্যে সেনা প্রধানের ঘটনাস্থলে যাওয়ারও নজির নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  #