মণিপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরাল উন্মত্ত জনতা, ক্ষয়ক্ষতি
ভারতে বিজেপিশাসিত মণিপুরে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে উন্মত্ত জনতা।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন ধরানো হয় তার বাড়িতে। মন্ত্রী অবশ্য সে সময়ে বাসায় না থাকায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। এর আগে গত ২৫ মে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের বাড়িতে আক্রমণ করেছিল উন্মত্ত জনতা। সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে হয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনীকে।
আজ (শুক্রবার) মন্ত্রী বলেন, গতকাল রাতে যা হয়েছে তা দেখে খুব খারাপ লেগেছে। আমাকে বলা হয়েছে, রাত ১০টার দিকে ৫০ জনের বেশি দুর্বৃত্ত আমার বাড়িতে হামলা চালায়। প্রথম তলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও বাড়িতে কেউ ছিল না।
কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং আজ বলেন, ‘বর্তমানে আমি অফিসিয়াল কাজে কেরালায় আছি। সৌভাগ্যক্রমে গতকাল রাতে আমার ইম্ফল বাড়িতে কেউ আহত হয়নি। পেট্রোল বোমা নিয়ে এসেছিল দুর্বৃত্তরা। আমার বাড়ির নিচতলা ও প্রথম তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার নিজের রাজ্যে যা ঘটছে তা দেখে খুব খারাপ লাগছে। আমি এখনও শান্তির জন্য আবেদন চালিয়ে যাব। এ ধরনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িতরা একেবারেই অমানবিক।’
আসলে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ আচমকা উন্মত্ত জনতা এসে জোর করে মন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের বাসভবনে ঢুকে পড়ে। তার সম্পত্তিতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এমনকি গেটে মোতায়েন হাউস গার্ডরাও ভিড় থামাতে পারেনি। ঘটনার সময় মন্ত্রী নিজে বা তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
গত (বুধবার) মণিপুর সরকারের এক মাত্র মহিলা মন্ত্রী কাংপোকপি কেন্দ্রের বিধায়ক নেমচা কিপজেনের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল বিক্ষুদ্ধ জনতা। কুকি জনগোষ্ঠীর নেত্রী নেমচার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতা এবং হিংসায় মদতের অভিযোগ এনেছিলেন মেইতেই গোষ্ঠীর কয়েকজন নেতা।
প্রসঙ্গত, মণিপুরে গত ৩ মে উপজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল। মণিপুর হাই কোর্ট ‘মেইতেই’দের ‘তফসিলি উপজাতি’র মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই উপজাতি সংগঠনগুলো যৌথভাবে তার বিরোধিতায় যৌথভাবে মাঠে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সহিংসতার সূচনা হয় সেখানে।
মণিপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ‘মেইতেই’ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ থামাতে গত ৬ মে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সহিংসতা থামাতে নামানো হয় সেনাবাহিনী এবং অসম রাইফেলসকে। কিন্তু গত দেড় মাসেও শান্তি ফেরেনি সেখানে। সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ১২০ হতে চলেছে। অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়ে ত্রাণ শিবিরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে, গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, মিয়ানমার থেকে প্রায় ৩০০ সশস্ত্র লোক রাজ্যের বিষ্ণুপুর জেলায় প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, তোরবুঙের জঙ্গলে ঘাঁটি তৈরির পর এই হিংস্র গোষ্ঠী চুড়াচাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো তাদের শনাক্ত করতে ড্রোন ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষ্ণুপুর জেলার ত্রংলাওবিতে পুলিশের একটি গাড়িতে নির্বিচারে গুলি চালায় কুকি আততায়ীরা। এতে একজন পুলিশ কমান্ডো নিহত এবং অপর দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় রাজ্যে মোবাইল ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা ২০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএআর/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।