১৪৩ এমপি সাসপেন্ড
গালিবাজ এমপি সংসদের ভেতরে আর যারা প্রশ্ন করে তারা বাইরে: দানিশ আলী
-
দানিশ আলী
ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি ও সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের নকলের বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং বিরোধীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধ চলছে।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের সম্মানহানির অভিযোগে বিরোধীদের কোণঠাসা শুরু করেছে বিজেপি। পাল্টা জবাব দিচ্ছে বিরোধীরাও। সম্প্রতি তৃণমূল এমপি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সংসদের বাইরে উপ-রাষ্ট্রপতি ও সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে নকল করে তার মানহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভায় স্পিকার ও অন্যরা জগদীপ ধনখড়ের সমর্থনে তার প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। জগদীপ ধনখড়কে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এই আবহে এবার সাবেক বিএসপি নেতা ও সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য দানিশ আলীও সংসদে তাকে গালি দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। গতকাল (বুধবার) তিনি বলেন, যিনি গালি দেন তিনি সংসদের ভেতরে বসে আছেন এবং যারা প্রশ্ন করে তারা বাইরে। তিনি বিজেপি এমপি রমেশ বিধুরিকে টার্গেট করে ওই মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন বিজেপি এমপি রমেশ বিধুরি হাউসে দানিশ আলী এমপিকে তীব্র কটূক্তি এবং গালিগালাজ করেন। বিএসপি নেতা দানিশ আলী এমপিকে 'মোল্লা', 'উগ্রবাদী', 'কাটুয়া' (খতনাকারী), 'ভাড়ুয়া' (পতিতাদের দালাল), 'বাহার ফেঁকো ইস মোল্লেকো' (এই মোল্লাকে বাইরে ফেলে দাও), ‘ইয়ে উগ্রবাদী হ্যায়, ইয়ে আতঙ্কবাদী (সন্ত্রাসী) হ্যায়’ ইত্যাদি বলে গালি দিয়েছিলেন বিজেপি এমপি রমেশ বিধুরি। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়।
বিজেপি এমপি রমেশ বিধুরির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলেন দানিশ আলী। যদিও, সংসদে রমেশ বিধুরির বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিজেপি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছিল। এমতাবস্থায় আবারও সেই প্রসঙ্গ উঠেছে।
গতকাল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে আলাপকালে দানিশ আলী এমপি বলেন, 'দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় যখন আজ তার ব্যথার কথা জানাচ্ছিলেন, তখন আমার ক্ষত আবার তাজা হয়ে উঠেছে। আমি আজ জানতে পেরেছি যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করে উপ-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, 'আমিও সেই সংসদের সদস্য যার নেতা প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি অন্তত আমাকেও একটা ফোন দিতেন বা দু’লাইনের চিঠি লিখে যদি পাঠাতেন। কমপক্ষে আমার সাথে যা হয়েছে তার নিন্দা করতেন। তিনি এটাও বলতে পারতেন যে, এই ঘটনা গণতন্ত্রের মন্দিরকে (সংসদ) লজ্জা দিয়েছে।’
সাবেক বিএসপি নেতা দানিশ আলী বলেন, 'আমার সাথে দুর্ব্যবহারের নিন্দা করার পরিবর্তে, বিজেপি তার এমপি রমেশ বিধুরিকে বাঁচাতে শুরু করেছে। কেন তারা এমন বৈষম্য করছেন তা দেশের প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিত।
তিনি বলেন, 'শুধু বিজেপিই বলতে পারবে, যিনি গালাগালি করবেন তিনি সংসদে বসবেন এবং যারা প্রশ্ন করবে তাদের বাইরের পথ (সাসপেন্ড) দেখানো হবে। যে বিজেপি এমপি নিজেই হাউসে অনুপ্রবেশকারীদের (ধোঁয়া হামলা চালানো অভিযুক্তদের সংসদে প্রবেশের পাস দেওয়া) নিয়ে এসেছিলেন তিনি ভেতরে বসে থাকবেন এবং বিরোধী এমপিরা যদি এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তবে তাদের সাসপেন্ড করে বাইরের পথ দেখানো হবে। গণতন্ত্র ও দেশ এভাবে চলে না। এভাবে দেশ চালাতে চাইলে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। সেখানেই সবকিছু ঠিক করতে হতো। ১৪১ জন এমপিকে সাসপেন্ড করার কী দরকার ছিল?’
প্রসঙ্গত, দানিশ আলী ওই ১৪১ জন এমপির মধ্যে রয়েছেন যাকে সংসদে হট্টগোল সৃষ্টি করা এবং সঠিক আচরণ না করার জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। বর্তমানে সাসপেন্ড হওয়া বিরোধী এমপির সংখ্যা বেড়ে ১৪৩ জনে পৌঁছেছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএআর/২১