বিজেপি সরকার বিলকিস বানুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুক: ওয়াইসি
মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে বিলকিস বানুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেছেন।
গুজরাটের বহুলালোচিত বিলকিস বানুর গণধর্ষণ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট মুক্তির আদেশ বাতিল করে ধর্ষকদের পুনরায় জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে ওই অপরাধীদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। সেই প্রসঙ্গে মিম প্রধান ওয়াইসি আজ কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে টার্গেট করে তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে দাবি জানিয়েছেন। অপারাধীর মুক্তির বিষয়ে বিজেপিশাসিত গুজরাট সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন ওয়াইসি।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে বিজেপিশাসিত ভয়াবহ গুজরাট দাঙ্গার সময় গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বিলকিস বানু। ২০২২ সালে স্বাধীনতা দিবসের দিন এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১১ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে আগাম মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল গুজরাট সরকার। আজ আজ (সোমবার) সেই নির্দেশ বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এরফলে মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ জনকে ফের জেলে যেতে হবে।
এর পাশাপাশি বিচারপতি বিভি নাগারত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার সমন্বিত বেঞ্চ রায়ে জানিয়েছে, ওই ১১ জন দোষীকে রেহাই দেওয়ার এক্তিয়ারই ছিল না গুজরাট সরকারের। প্রথমত, ঘটনাটি গুজরাটে ঘটলেও মামলাটিকে মহারাষ্ট্রের আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তাই মুক্তির নির্দেশ দিতে হলেও তা মহারাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী একমাত্র মহরাষ্ট্র সরকারই দিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, যাবজ্জীবনের ১৪ বছরের সময়সীমা ২০১৪ সালেই বেড়ে ২০ বছর হয়ে গিয়েছে। এই দুটি তথ্যই মুক্তির আবেদনের সময় লুকিয়ে গিয়েছিল গুজরাট সরকার। সেজন্য আজ সর্বোচ্চ আদালতের কড়া ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয় গুজরাট সরকারকে। তথ্য লুকোনোর বিষয়টিকে প্রতারণার সমান বলে অভিহিত করেছে সর্বোচ্চ আদালত।
প্রসঙ্গত, মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ জন আসামীর সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ঘনিষ্ঠতা একাধিকবার সামনে এসেছে। এমনকি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাদের একমঞ্চেও দেখা গেছে। সেজন্য আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গুজরাটের বিজেপি সরকারের মুখ পুড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ওই ইস্যুতে ‘মিম’ প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি আজ বলেন, বিলকিস বানুর ধর্ষকদের বিজেপিই মুক্ত করেছিল। বিলকিস বানু নিজের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছিলেন এবং এটি মনে রাখা উচিত যে বিলকিস বানুকে নির্যাতনকারী ধর্ষকদের বিজেপিই মুক্ত করেছিল। বিজেপির লোকেরা তাদের (ধর্ষকদের) গলায় মালা পরিয়েছিল। গুজরাটের বিজেপি সরকার ধর্ষকদের সাহায্য করার জন্য কাজ করছিল। বিজেপির দুই বিধায়ক এই ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন ওয়াইসি।
এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে সিপিআই(এম)-এর পলিটব্যুরো সদস্যা বৃন্দা কারাত বলেন, বিলকিস বানু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আমরা স্বাগত জানাই। এই রায় গুজরাট সরকারের ওপর কঠোর থাপ্পড়।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালায় উগ্রহিন্দুত্ববাদী দুর্বৃত্তরা। এসময়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তার তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বাইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সাফাই দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/ ০৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।