পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সফরে ক্ষুব্ধ ভারতের প্রতিবাদ
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জেন ম্যারিয়ট সম্প্রতি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর সফর করায় ভারত তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতায় ‘হস্তক্ষেপ’ করাকে ‘আপত্তিজনক’ বলে মনে করা হচ্ছে। বিবৃতিতে এটাও বলা হয়েছে যে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কাটরা এই বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কাছে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে মীরপুর সফরে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জেন ম্যারিয়ট। সেখানে তিনি বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ী এবং ছোটদের একটি ফুটবল দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রদূত জেন ম্যারিয়ট এক বার্তায় বলেন, পাক বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের ৭০ শতাংশই মীরপুরের বাসিন্দা। আতিথেয়তার জন্য মীরপুরের বাসিন্দাদের ধন্যবাদও জানান তিনি।
ওই ইস্যুতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ সর্বদা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ থাকবে। ইসলামাবাদের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যাওয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ভারত এবং এই বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে। ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতায় এ ধরণের হস্তক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়।’
raj
উল্লেখ্য, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি ব্রিটেন সফর করেছেন। এটি ছিল গত ২২ বছর পর ব্রিটেনে ভারতের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফর। সেখানে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার সঙ্গে খুব উৎসাহের মধ্যে বৈঠক করেন। গত বুধবার তারা দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ সময়ে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ব্রিটেনের প্রথম হিন্দু প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে রাম দরবারের একটি মূর্তিও উপহার দেন। বৈঠকে ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্যার টিম ব্যারোও উপস্থিত ছিলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে একটি উষ্ণতাপূর্ণ বৈঠক হয়েছে বলে জানান। ওই আবহে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের পাক অধিকৃত কাশ্মীর সফরের ঘটনায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে যাওয়া নিয়ে অবশ্য বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগেও অনেক বিদেশি প্রতিনিধি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান খুবই স্পষ্ট যে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই কেউ সেখানে গেলে তা সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
কিছু দিন আগেই ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর আসলে আমাদের।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় ২৪টি আসন আমরা সংরক্ষিত রেখেছি। কারণ, ওটা আমাদের জায়গা।’
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডোনাল্ড ব্লোম গিলগিট-বালটিস্তানে সফরে যাওয়ার পরে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল ভারত। বিশ্বের কাছে ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছিল নয়াদিল্লি।
২০২২ সালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গেলে, ভারত সে সময়েও নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল।
এদিকে, হিন্দু ধর্মের জগদ্গুরু রামানন্দাচার্য স্বামী রামভদ্রাচার্য পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফিরে পেতে বিশেষ সঙ্কল্প গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, এটা আমাদের ছিল কিন্তু পাকিস্তান দখল করে নিয়েছে। এজন্য তারা বিশেষভাবে হনুমান মহাযজ্ঞ এবং হনুমান মন্ত্রের আরতি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তার মতে, হনুমানজি যদি রাবণ দ্বারা চুরি করা সীতাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন, তাহলে পাক অধিকৃত আমাদের দেশের একটি অংশও আমাদের দেবেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/১৪