ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪ ১৬:০৬ Asia/Dhaka
  • উত্তরাখণ্ডের সহিংস ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি

ভারতে উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানিতে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা (I.N.D.I.A)।

আজ (শনিবার) রাজভবনে রাজ্যপাল অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুরমিত সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ও সুশীল সমাজের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের পক্ষ থেকে নৈনিতাল জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও এসপিকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে তাদের পদ থেকে অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে। স্মারকলিপিতে রাজ্য সরকারের দ্বারা পরিচালিত দখল উচ্ছেদ অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজেপিশাসিত উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানিতে একটি মাদ্রাসা উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, মাদ্রাসাটি বেআইনিভাবে নির্মিত হয়েছিল। এটি উচ্ছেদ করতে গিয়েছিলেন পৌরসভার কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা। এরপর স্থানীয় মানুষজন ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। সন্ধ্যায় সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ। ভয়াবহ ওই ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কারফিউ জারি করার পাশাপাশি দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ এ পর্যন্ত অজ্ঞাত ৫ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করেছে। এবং ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। 

গণমাধ্যমে প্রকাশ, ওই ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৫টি লাশের পোস্টমর্টেম করেছে। এরা হলেন, ফাইম (২৬), শাহনওয়াজ (২০), আনাস (১৬) জাহিদ (৪৫ বছর) এবং প্রকাশ (২৩)। বলা হচ্ছে, এদের সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। 

এদিকে, রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে বলা হয়েছে হলদোয়ানির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক, এটি সম্পূর্ণরূপে প্রশাসনিক ত্রুটি এবং ব্যর্থতার ঘটনা। গতকাল (শুক্রবার) কংগ্রেস সদর দফতর   দেরাদুনে দলীয় নেতাসহ বিরোধী নেতাদের এক বৈঠক হয়। এতে বলা হয়েছে- এ ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু প্রশাসন ও সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যার ফলে এ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি সস্তা রাজনীতি করছে এবং এ ধরণের ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। কোনো নোটিশ না দিয়ে প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট ও বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে, এই কর্মকাণ্ড অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এদিকে, হলদোয়ানির সাংবাদিক সঞ্জয় রাওয়াত প্রশাসনের তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ওই বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল, এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন হঠাৎ করে মাদ্রাসা-মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনা কেন করল তা বড় প্রশ্ন।    

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক রাজেন্দ্র সিং নেগির মতে, রাজ্য সরকার আসলে কোনো না কোনোভাবে মুসলমানদের উসকানি দিতে চায়। এমনকী ইউসিসি (ইউনিফর্ম সিভিল কোড/অভিন্ন দেওয়ানি বিধি) বিল বিধানসভায় পাস হওয়ার পরেও, মুসলমানরা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় না নামায়, সরকারের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। তাই হলদোয়ানিতে কোনো প্রয়োজন ছাড়াই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।

সমাজবাদী পার্টির নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্য বলেছেন, উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানির বনভুলপুরা এলাকায় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন প্রথমে মাদ্রাসা এবং মসজিদ ভেঙে দেয় এবং তারপরে পুলিশ মহিলাদের উপর নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করে, যা বিজেপি সরকারের নোংরা চিন্তাভাবনার পরিচয় দেয়। বিজেপি সরকারকে নিজের ভিতরে তাকানো উচিত এবং দেখা উচিত যে তারা প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীজির ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’(সবার সঙ্গে সকলের উন্নয়ন) শ্লোগানকে হত্যা করছে। সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে বিজেপির বিদ্বেষী চিন্তার আভাস দেখা যেতে শুরু করেছে। আমি উত্তরাখণ্ড সরকারের এই অপকর্মের তীব্র নিন্দা জানাই বলেও মন্তব্য করেছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্য।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/১০

ট্যাগ