দিল্লি, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে সতর্কতা
‘সিএএ’র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ মুসলিম লীগ, অসমে বনধের ডাক
ভারতে গতকাল (সোমবার) বহুলালোচিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ/ক্যা) দেশ জুড়ে কার্যকর হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ (মঙ্গলবার) সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ।
অন্যদিকে, বিজেপিশাসিত অসমে আজ বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের মুখে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলীয় নেতারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লি, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মুসলিম লীগের আবেদনে বলা হয়েছে, ধর্মের ভিত্তিতে এখানে নাগরিকত্বের অর্থ তৈরি করা হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগির কথা বলা হয়েছে, তাই এই আইন পুরোপুরি অসাংবিধানিক এবং অবিলম্বে ওই আইন কার্যকরে স্থগিতাদেশ জারির আবেদন জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, যেহেতু আইনটি নাগরিকত্বকে ধর্মের সাথে যুক্ত করেছে এবং শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাসের প্রবর্তন করেছে, তাই এটি প্রাথমিক দৃষ্টিতে অসাংবিধানিক এবং সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে এটিকে স্থগিত করা উচিত।
মুসলিম লীগের বক্তব্য- এই আইনে অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদানের দ্রুত প্রক্রিয়ার কথা রয়েছে। এই আইনে মুসলিমদের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে এই আইন কার্যকরে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো লঙ্ঘিত হবে। ধর্মনিরপেক্ষতার মূলে আঘাত করবে এই আইন। তাই সিএএ নিয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে পর্যন্ত আদালত যদি এই আইন আপাতত কার্যকর করা আটকায় তাহলে তা দেশের পক্ষে ভালো হবে। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে আগে থেকেই সিএএ’র বিরুদ্ধে ২০০-এর বেশি আবেদন জমা পড়ে আছে।
অন্যদিকে, বিজেপিশাসিত অসমে সিএএ কার্যকরের বিরুদ্ধে গতকাল রাত থেকেই আন্দোলন শুরু হয়েছে। অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন সিএএ’র প্রতিলিপি পুড়িয়ে, মিছিল করে বিরোধিতা শুরু করেছে। প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে ৩০টি উপজাতীয় সংগঠন ও ১৬ দলের বিরোধী মঞ্চ। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন বলেছেন, সিএএ চালু করে বিজেপি বিভাজনমূলক রাজনীতি করতে চাচ্ছে। মুসলিম ও শ্রীলঙ্কার তামিলদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বিজেপি। আমজনতার ভয়ে বিজেপি এই আইনটিকে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়েছিল। ভোটের মুখে মোদি তার ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচাতে ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে চাচ্ছেন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রতিক্রিয়া- মুদ্রাস্ফীতির জেরে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠছে। চাকরির জন্য দরজায় দরজায় ঘুরছে। সেই সমস্ত সমস্যার সমাধানের বদলে তারা ‘সিএএ’ চালু করল। এর অর্থ, তারা প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে ভারতে লোক আনতে চায়। নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করার জন্য।
এনসিপি শারদ গোষ্ঠীর প্রধান শারদ পাওয়ারের দাবি, নির্বাচনী বন্ড ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতেই সিএএ কার্যকর করা হয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হতেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে অসমের বিরোধী বিভিন্ন দল। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ইউনিয়ন।
অসমের কংগ্রেস নেতা দেবব্রত সইকিয়া সিএএ কার্যকর করার সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। রাইজর দলের সভাপতি ও বিধায়ক অখিল গগৈ বলেছেন, ‘অসমে অবৈধভাবে বাস করা ১৫/২০ লাখ বাংলাদেশি হিন্দুকে আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। এই অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনও পথ নেই।’
বিজেপিকে টার্গেট করে উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, ‘যখন দেশের মানুষ কাজের খোঁজে বাইরে চলে যাচ্ছেন, তখন অন্যদের জন্য নাগরিকত্ব আইন এনে কী হবে? লোকসভা ভোটের মুখে সিএএ চালু কেন করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল। কেন্দ্রীয় সরকার ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে সিএএ কার্যকর করেছে বলে দাবি ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা অজয় সাধোত্রার।
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।