রাম মন্দির নির্মাণের জন্য সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আইন পাস: বিজেপি এমপি
(last modified Mon, 19 Nov 2018 08:54:40 GMT )
নভেম্বর ১৯, ২০১৮ ১৪:৫৪ Asia/Dhaka

ভারতের উত্তর প্রদেশের বিজেপি সংসদ সদস্য রবীন্দ্র কুশওয়া বলেছেন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য আইন পাস করা হবে। গত শনিবার তিনি দলীয় কর্মীদের এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণে ওই দাবি করেছেন।  

রবীন্দ্র কুশওয়ার দাবি, আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে রাম মন্দিরের জন্য সংসদে আইন পাস হবে। কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকার এজন্য গত ১৬ নভেম্বরেই দলীয় সকল সাংসদকে হুইপ জারি করে সংসদের অধিবেশনের সময় দিল্লির বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।  

কুশওয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই রাম মন্দির নির্মাণের জন্য সংসদে আইন পাস করা হবে। মোদী, সরদার প্যাটেলকে গুরু বলে মনে করেন। প্যাটেল যেভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের জন্য আইন তৈরি করিয়েছিলেন, সেভাবেই মোদিও রাম মন্দির নির্মাণের জন্য আইন তৈরি করবেন।’

রবীন্দ্র কুশওয়া বলেন, ‘যখন সংসদে রাম মন্দির নির্মাণের আলোচনা হবে তখন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বাস্তবতাও ধরা পড়বে তিনি কত বড় পৈতেধারী ও শিবভক্ত।’

বিজেপি’র সিনিয়র নেতা সুব্রমনিয়াম স্বামী

অন্যদিকে, গত (শনিবার) কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় বিজেপি’র সিনিয়র নেতা সুব্রমনিয়াম স্বামী বলেছেন, ‘রাম রাষ্ট্রীয় ভগবান। দেশের কোনও শক্তিই রাম মন্দির নির্মাণে বাধা দিতে পারবে না। আমাদের দেশ ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আছে যা জাতি গঠনের সন্ধিক্ষণ।’ রাম জন্মভূমির জন্য সরকার আইন তৈরি করতে পারে বলেও সুব্রমনিয়াম স্বামী জানান।       

একইদিন, উত্তর প্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সুরিন্দর সিং গণমাধ্যমের সামনে আক্ষেপ করে বলেছেন, হিন্দুত্ববাদী মোদীজি প্রধানমন্ত্রী, যোগীজির মতো হিন্দুত্ববাদী নেতা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় তাঁদের আমলেও রামের ঠাঁই সেই তাঁবুতেই রয়ে গেল! এটা ভারত এবং হিন্দু সমাজের দুর্ভাগ্য! এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ হয়।

বিজেপি বিধায়ক সুরিন্দর সিং

রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে নানাভাবে তৎপরতার মধ্যে গত (শুক্রবার) মথুরায় উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা লক্ষ্মী নারায়ণ চৌধুরী বলেছেন, ‘আগামী বছরে লোকসভা নির্বাচনের আগেই অবশ্যই রাম মন্দিরের শিলান্যাস হবে এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ওই শিলান্যাস করবেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই।’ বর্তমান সময়ে ভারতীয় জনগণ অযোধ্যায় ভগবান শ্রীরামের মন্দির চাচ্ছেন বলেও উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী লক্ষ্মী নারায়ণ চৌধুরীর দাবি।

এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট সিনিয়র অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আজ (সোমবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আমার মনে হয় গোটা ব্যাপারটা রাজনৈতিক। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনীতি ও ক্ষমতা দখলের লড়াই যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তার কাছে নৈতিকতা, মানবিকতা, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এগুলো সবই অর্থহীন। কাজেই আমরা বাস্তব সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই। যেকোনো মুল্যেই তাঁরা এটা করবে। কেননা আগামী নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য ওঁদের ঝুলিতে আর বিশেষ কিছুই অবশিষ্ট নেই। ওঁদের সমস্ত  ফানুসই ফেটে গেছে, চুপসে গেছে। এখন একমাত্র রাম মন্দিরকে মূলধন করেই ওঁদের নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে হবে। এই অবস্থায় ওঁদের যা যা করনীয় সেটা করার কাজ শুরু করেছে।’  

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই প্রেক্ষিতে আমরা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই বিশেষত ভারতীয় মুসলিম সমাজ যাদের বাবরী মসজিদকে কেন্দ্র করে আবেগ আছে, তাঁরা সংযত হয়ে যাক। যদি মসজিদ পুনর্নির্মাণ নাও হয় এবং একটা মন্দির নির্মিত হয় তাতে বিরাট কিছু ক্ষতি নেই। আল্লাহ্‌র মসজিদ তিনি নিজে তা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন। এবং পৃথিবীতে মুসলিমরা অনেকভাবেই লাঞ্ছিত, নির্যাতিত হচ্ছেন। এই অবস্থায় বাঙালি বা ভারতীয় মুসলিম যারা আছেন তাঁরা নতুন করে আর ইন্ধন না জোগাতেই পারেন বিজেপির এই রাজনৈতিক এজেন্ডায়। এতে  সামগ্রিকভাবে জাতি ও রাষ্ট্রের সুবিধা হবে। আর যদি আমরা ভারতীয় মুসলিমরা আবেগ দেখানোর চেষ্টা করি তাহলে একটা অশান্তি তৈরি হবে এবং সেই অশান্তির প্রেক্ষিতে আখেরে বিজেপিই লাভবান হবে। তাঁরা যে রাজনৈতিক এজেন্ডাকে সামনে রাখতে চাচ্ছে তাতে সফল হবে।’

এরফলে আগামীদিনে তাঁদের রাজনৈতিক পথ আরও মসৃণ হবে। কাজেই ভারতীয় অনেক বেশি মুসলিমরা সহিষ্ণুতার পরিচয় দিলেই তাঁদের আগামী দিনের চলার পথ খানিকটা সুবিধাজনক হবে বলে আমার বিশ্বাস’ বলেও ড. সাইফুল্লাহ বলেন। 

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১৯

 

ট্যাগ