অযোধ্যায় হিন্দুত্ববাদীদের কর্মসূচিতে মুসলিমদের মধ্যে আশঙ্কা, নিরাপত্তা জোরদার
(last modified Thu, 22 Nov 2018 14:14:11 GMT )
নভেম্বর ২২, ২০১৮ ২০:১৪ Asia/Dhaka
  • বাবরী মসজিদ মামলার বাদী ইকবাল আনসারি
    বাবরী মসজিদ মামলার বাদী ইকবাল আনসারি

ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় আগামী ২৪/২৫ নভেম্বর হিন্দুত্ববাদী দল ও সংগঠনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সেখানকার মুসলিমদের মধ্যে নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে।

এরআগে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ মামলার অন্যতম বাদী ইকবাল আনসারি নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘অযোধ্যার মুসলিমরা এরকম আতঙ্কের মধ্যে থাকলে তাদেরকে জীবন বাঁচাতে অযোধ্যা ত্যাগ করতে হবে।’

তিনি বলেন, অযোধ্যায় ফের ১৯৯২ সালের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ১৯৯২ সালে আরএসএস ও বিশ্বহিন্দু পরিষদ এরকমই ভিড় জমিয়েছিল। এরফলে মুসলিমদের বাসা ও দোকান লুট করা হয়েছিল। সেসময় মুসলিমদের ব্যবসা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। ফের সেরকমই পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আগেই বলেছি আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে প্রস্তুত আছি। এরকম অবস্থায় অযোধ্যায় কেন ভিড় জমানো হচ্ছে?’ ইকবাল আনসারী বলেন, ‘মুসলিম সম্প্রদায়কে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে এখানে ভিড় জোটানো হচ্ছে।’

অযোধ্যায় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে উগ্র ধর্মান্ধরা কয়েকশ’ বছরের পুরোনো বাবরী মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, ওখানেই ভগবান রামের জন্মস্থান, সেজন্য সেখানেই অবশ্যই রাম মন্দির নির্মাণ করতে হবে। বিষয়টি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ও আগামী জানুয়ারিতে ওই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই আগামী ২৫ নভেম্বর আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, শিবসেনা সেখানে রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে মাঠে নামছে। ২৪ নভেম্বর থেকে দুই দিনের সফরে দলীয় কয়েক হাজার সমর্থক নিয়ে অযোধ্যায় যাবেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। শিবসেনা এরইমধ্যে স্লোগান তুলেছে, ‘হর হিন্দুকে ইয়েহি পুকার, প্যাহেলে মন্দির ফির সরকার’ (সব হিন্দুর একটাই চাহিদা, আগে মন্দির পরে সরকার)। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এন্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড, আধাসামরিক বাহিনী, র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। জনতার উপরে নজরদারি চালানোর জন্য ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। পুলিশের মহানির্দেশক ও পি সিং আজ (বৃহস্পতিবার) বলেন, অযোধ্যায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২৪ নভেম্বর থেকেই পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অযোধ্যায় ঘাঁটি গাড়বেন। অযোধ্যার সিনিয়র পুলিশ সুপার জোগিন্দর সিং বলেন, ২০ কোম্পানি পিএসি ও দুই কোম্পানি র‍্যাফ পাঠানোর দাবি জানানো হয়েছে।

মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী

এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গ্রন্থাগার ও জনশিক্ষা প্রসার দফতরের মন্ত্রী ও জমিয়তে উলামা হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী আজ (বৃহস্পতিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘বাবরী মসজিদ তো আর নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই, বাবরী মসজিদ ভেঙে সেখানে পুজোপাট শুরু করেছে। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু শুনানিতে কাগজপত্র চেয়েছে, এবং ওঁরা কোনও কাগজপত্র দিতে পারেনি। ওঁরা বলেছে, আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস। সেজন্য ওঁরা চাচ্ছে ২০১৯ সালে নির্বাচনে যেতে গেলে তাঁদের আর কোনও হাতিয়ার নেই। বাবরী মসজিদের গরম ইস্যুটাই তাঁদের একটা জাগরণের অবস্থা তৈরি করবে। এই কারণে ওঁরা ওখানে ভিড় জমাতে চাচ্ছে। এখন সরকারের দায়িত্ব হল, সকলকে নিরাপত্তা দেয়া। এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত।’ ‘বিজেপির যে দাগী চেহারা তা ফুটে উঠছে’ বলেও মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী মন্তব্য করেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/২২

ট্যাগ