১৬ ফেব্রুয়ারি ফের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন কেজরিওয়াল
(last modified Wed, 12 Feb 2020 12:42:17 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০ ১৮:৪২ Asia/Dhaka
  • আপ নেতাদের মাঝে অরবিন্দ কেজরিওয়াল
    আপ নেতাদের মাঝে অরবিন্দ কেজরিওয়াল

ভারতের দিল্লির আম আদমি পার্টি’র (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। এ নিয়ে তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন কেজরিওয়াল। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় ৬২ আসনে জয়ী হয়েছে ‘আপ’। অন্যদিকে, মাত্র ৮ আসন পেয়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র ভরাডুবি হয়েছে।

আজ (বুধবার) নিজের বাসায় দলীয় নবনির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন ‘আপ’ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেখানেই তিনি সর্বসম্মতভাবে বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচিত হন। ওই বৈঠক শেষেই শপথ গ্রহণের দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান ‘আপ’ নেতা মণীশ শিসোদিয়া। ওইদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গোটা ক্যাবিনেট শপথ নেবেন বলেও জানান তিনি। আগামী (রোববার) দিল্লির রামলীলা ময়দানে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান হবে। তাঁর শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন।

আপ নেতা মনীশ শিসোদিয়া বলেন, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি রামলীলা ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠান হবে। আগের মতো দিল্লির সমস্ত জনতার আছে আমার আবেদন যে, আপনাদের ছেলে, আপনাদের ভাই অরবিন্দ কেজরিওয়ালজি যখন শপথ নেবেন আপনারা প্রচুর সংখ্যায় সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁকে আশীর্বাদ ও ভালোবাসা প্রদান করবেন। আশীর্বাদ করবেন যেন বিগত পাঁচ বছরের চেয়েও আগামী পাঁচ বছরে যেন বেশি কাজ করতে পারেন।’

বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপি কার্যত পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে আম আদমি পার্টিকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছিল। দিল্লি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’টি জনসভা করেছিলেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রায় ৫০ টি সমাবেশ ও রোড শো করেন। অমিত শাহ বাড়ি বাড়ি প্রচারও করেছিলেন। বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা ৩০ টি সাধারণ সভা করেন। একই সময়ে, কেন্দ্রীয়মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ২৫ টিরও বেশি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ১২ টি এবং কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নিতীন গদকড়ি ১০টি সমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন।

বিজেপি’র নির্বাচনি প্রচারে মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে দলটির ফায়ারব্র্যান্ড নেতা ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দিল্লিতে ১৫ টি জনসভায় বক্তব্য রাখেন। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত এবং হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টরও বেশ কয়েকটি সমাবেশ করেছিলেন। একইসঙ্গে মধ্য প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ও মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসও দিল্লিতে দলের পক্ষে প্রচার করেছিলেন। অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা আক্রমণাত্মক প্রচারণা চালানো সত্ত্বেও নির্বাচনি ফলে বিজেপি দুই অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছতে পারেনি। ৭০ আসন সম্বলিত দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ২০১৫ সালে বিজেপি ৩ টি আসন জিতেছিল, এবার তারা মাত্র ৮ আসনে পৌঁছতে সমর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, আম আদমি পার্টি এবার ৭০ আসনের মধ্যে ৬২ আসনেই জয়ী হয়েছে এবং দিল্লিতে তারা ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কংগ্রেস গতবারের মতো এবারের নির্বাচনেও খাতা খুলতে পারেনি। ৬৭ টি আসনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে কংগ্রেস যদি আম আদমি পার্টির ভোট কেটে ভোট প্রাপ্তির হার বাড়াতে পারত তাহলে বিজেপি’র জয়ের পথ সুগম হতো। কিন্তু তা না হওয়ায় সরাসরি আপ ও বিজেপি’র মধ্যে লড়াই হওয়ায় বিজেপি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

দিল্লির তিনটি পৌর কর্পোরেশনে ক্ষমতায় থাকার এবং দিল্লি এলাকায় লোকসভার সাত এমপি থাকা সত্ত্বেও বিজেপি’র তা কোনই কাজে আসেনি। এরফলে দিল্লির চারটি সংসদীয় আসনে বিজেপি কোনও খাতাই খুলতে পারেনি।

দিল্লির শাহীনবাগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে মুসলিম নারীরা যেভাবে একটানা ধর্না-অবস্থানে রয়েছেন, তার বিরুদ্ধে বিজেপি আক্রমণাত্মক হওয়ায় মুসলিম ভোটাররা আম আদমি পার্টির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, যা প্রায় এক ডজন আসনকে প্রভাবিত করেছে। তাদের পাঁচ মুসলিম প্রার্থীই জয়ী হয়েছে। একই সাথে, কেজরিওয়ালও নরম হিন্দুত্বের পথ অবলম্বন করে হনুমান চালিশা পাঠ করে বিজেপি’র পক্ষে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ রোধেও সফল হয়েছেন।

আম আদমি পার্টি’র (আপ) বয়স মাত্র বছর সাতেক। দিল্লির মধ্যেই তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি সীমাবদ্ধ। সামান্য কিছু প্রভাব রয়েছে পাঞ্জাবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র ১২ কোটির বেশি সদস্য রয়েছে। বর্তমানে বিজেপি ও তাদের সহযোগীরা ১৬ রাজ্যে ক্ষমতাসীন রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিজেপি দিল্লির ক্ষমতায় যেতে নিজেদের সমস্ত প্রভাবশালী নেতাকে নির্বাচনি ময়দানে নামিয়েও ‘আপ’ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিজয় রথ থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। এভাবেই সবচেয়ে ছোট একটি দলের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ