নিজামুদ্দিনে আয়োজকরা অন্যায় করেছেন- সত্যেন্দ্র জৈন, পাল্টা সাফাই তাবলিগের
(last modified Wed, 01 Apr 2020 07:35:49 GMT )
এপ্রিল ০১, ২০২০ ১৩:৩৫ Asia/Dhaka
  • নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতের সদস্যরা
    নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতের সদস্যরা

ভারতে করোনা পরিস্থিতিতে রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিনে সম্প্রতি তাবলিগ জামাতের মারকাজে দ্বীনি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিতর্কে দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা ঘোর অন্যায় করেছেন।

অন্যদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাবলিগের নেতা মাওলানা সাদ এবং তাবলিগের অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট, ১৮৯৭ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির অন্যান্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। 

অন্যদিকে, তাবলিগ জামাতের পক্ষ থেকে দেওয়া সাফাইতে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রকৃত ঘটনা জানতেন তাহলে এমন করতেন না। তাবলিগের সাফাইতে বলা হয়েছে-    

১) যখন 'জনতা কারফিউ' ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন মারকাজে প্রচুর লোক ছিল। এদিনই মারকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাউকে বাইরে থেকে আসতে দেওয়া হয়নি। যারা মারকাজে ছিলেন, তাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।

২) ২১ মার্চ থেকে রেল পরিসেবা বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। সেজন্য বাইরের লোকদের পাঠানো সমস্যা ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও দিল্লির আশেপাশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। এরপরে মারকাজে প্রায় ১ হাজার লোক অবশিষ্ট ছিল। 

৩) জনতা কারফিউ’র পাশাপাশি, ২২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দিল্লিতে লকডাউন ঘোষিত হয়েছিল। বাস বা বেসরকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকদের তাদের বাড়িতে তাদের পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।

৪) প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর আদেশ মেনে লোকদের বাইরে পাঠানো সঠিক মনে হয়নি। সেজন্য তাদের মারকাজেই রাখা ভালো হয়েছিল।   

৫) ২৪ মার্চ পুলিশের এসএইচও নোটিশ পাঠিয়ে নিজামউদ্দিন ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। এর জবাবে আমরা বলেছিলাম যে, মারকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৫০০ জনকে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এখন ১ হাজার জন অবশিষ্ট আছে যাদের পাঠানো কঠিন। আমরা আরও জানিয়েছিলাম যে, আমাদের এখানে বিদেশি নাগরিকও রয়েছে।

৬) এরপরে, আমরা এসডিএম-এর (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) কাছে আবেদন করেছিলাম এবং ১৭ গাড়ির জন্য কারফিউ পাসের জন্য অনুরোধ করেছি যাতে লোকেরা বাড়িতে পাঠানো যায়। এ পর্যন্ত আমাদের পাস দেওয়া হয়নি। ২৫ মার্চ, তহসিলদার ও একটি মেডিকেল টিম এসে ওদের পরীক্ষা করে।

৭)  ২৬ মার্চ আমাদের এসডিএম অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল এবং জেলা প্রশাসকের সাথেও দেখা করানো হয়। আমরা আটকে পড়া লোকদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিলাম এবং কারফিউ পাসের জন্য দাবি জানাই। ২৭ মার্চ,  ৬ জন অসুস্থ হওয়ার কারণে তাদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

৮) ২৮ মার্চ, এসডিএম এবং ‘হু’র টিম ৩৩ জনকে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়, যাদের রাজীব গান্ধী ক্যান্সার হাসপাতালে রাখা হয়েছিল।

৯) ২৮ মার্চ, পুলিশের এসিপি লাজপত নগর থেকে নোটিশ আসে যে আমরা গাইডলাইন এবং আইন লঙ্ঘন করছি। কিন্তু পরেরদিনেই এর সম্পূর্ণ জবাব পাঠানো হয়েছিল।

১০) ৩০ মার্চ, আচমকা সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, করোনা রোগীদের মারকাজে রাখা হয়েছে এবং সেখানে রেইড করা হচ্ছে।

১১) এখন মুখ্যমন্ত্রীও মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যদি বাস্তবতা জানতেন তাহলে তিনি এমন করতেন না।

১২) আমরা প্রতিনিয়ত পুলিশ এবং কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি যে আমাদের এখানে লোকেরা অবস্থান করছে। এই লোকেরা আগে থেকেই এখানে ছিল। তাঁরা আচমকাই এই রোগের সম্পর্কে জানতে পারে।

১৩) আমরা কাউকেই বাসস্ট্যান্ড বা সড়কে ঘোরাঘুরি করতে দিইনি এবং তাঁদেরকে মারকাজে রেখে দিয়েছিলাম যেমনটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল। আমরা দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছি।

করোনা পরিস্থিতিতে তাবলিগের কর্মসূচি এবং করোনা আক্রান্ত হয়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনায় বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, এটি একটি অপরাধমূলক অবহেলা। কিছু মানুষের অপরাধের ফল ভুগতে হচ্ছে গোটা দেশকে। বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারিও দিল্লির নিজামুদ্দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপত্তিকর বিরূপ মন্তব্য করেছেন।  

ওমর আব্দুল্লাহ

অন্যদিকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ও জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ বলেছেন, এবার কারও কাছে তাবলিগ জামাত সহজতম অজুহাত হয়ে উঠবে, যাতে সর্বত্র মুসলিমদেরকে বদনাম দেওয়া যায় যেন আমরাই করোনা সৃষ্টি করেছি এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছি। দেশের বেশিরভাগ মুসলিম সরকারি বিধি ও পরামর্শকে পালন করেছেন এবং অন্যদেরও সেই নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।    

তিনি আরও বলেন, এসব লোক যেকোনো ভাইরাসের থেকে বিপজ্জনক যারা তবলিগ ভাইরাসের মতো হ্যাশট্যাগের সঙ্গে টুইট করছেন। এরা শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মন অসুস্থ বলেও ওমর আব্দুল্লাহ কটাক্ষ করেছেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ