তাবলিগ জামাতের ২,৪৪৬ সদস্যকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিল দিল্লি সরকার
(last modified Sun, 10 May 2020 09:29:42 GMT )
মে ১০, ২০২০ ১৫:২৯ Asia/Dhaka

ভারতের দিল্লি সরকার তাবলিগ জামাতের দুই হাজার ৪৪৬ সদস্যকে কোয়ারেন্টাইন থেকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে সমস্ত জেলা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশসহ তাঁরা তাদের বাড়ি ছাড়া যাতে অন্য কোথাও না অবস্থান করেন তাও নিশ্চিত করতে বলেছে। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় দিল্লি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (ডিডিএমএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেএস মীনা এসংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছেন।

জেলা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশে দিল্লির মারকাজের অনুষ্ঠানে অন্যান্য রাজ্য থেকে অংশ নেওয়া জামাতের প্রতিনিধিদের তাদের বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, গত মার্চ মাসে, দিল্লির নিজামুদ্দিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ৫৬৭ বিদেশি পুলিশকে হস্তান্তর করা হবে। সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিসা লঙ্ঘনের মতো বিভিন্ন বিধি লঙ্ঘনের জন্য তাদের (বিদেশি তাবলিগ জামাত সদস্য) পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হবে।’

সম্প্রতি দিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ করা এবং যাদের মধ্যে করোনা ধরা পড়েনি এমন তাবলিগ জামায়াত সদস্যদের বাসায় ফেরার কথা বলেন।

শনিবার দিল্লির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা দিল্লি বাদে অন্য জায়গার বাসিন্দাদেরকে নির্ধারিত নির্দেশিকা অনুযায়ী তাঁদেরকে ছেড়ে দিতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে বেরোনোর জন্য পাস দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই উল্লেখিত ব্যক্তিদের মসজিদসহ অন্য কোনও স্থানে থাকতে দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।

দিল্লির তাবলিগ জামাতের মারকাজে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে একশ্রেনির গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় করোনা ছড়ানোর জন্য তাবলিগ সদস্যদের দায়ী করা হয়। তাবলিগের কিছু সদস্য করোনা আক্রান্ত হলেও গণমাধ্যমের ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তাবলিগ সদস্যদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় এবং তাঁদের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এবার তাঁদের মধ্যে থেকে যাদের করোনা ধরা পড়েনি এমন ২ হাজার ৪৪৬ সদস্যকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার।

এ সম্পর্কে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আজ (রোববার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ওরা সবটা জেনে বুঝেই করেছে একথা জোরদিয়ে বলব না। কিন্তু একটা বিদ্বেষ থেকেই এটা করতে চেয়েছিল। এবং যতরকমভাবে নিজামুদ্দিন ও করোনাকে সংযোগ করার চেষ্টা করেছেন সবক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছেন। এত এত মানুষ মারা গেছেন, এত সংক্রমণ, এটাকে প্রচার করে দিয়ে জনমানসে যে বিদ্বেষ তৈরি করা হয়েছিল, সেই বিদ্বেষের ফানুস আস্তে আস্তে কার্যত ফাটছে। কিন্তু তারপরেও যে রেশ রয়ে যাবে সেটার থেকে কতদিনে আমরা মুক্ত হবো, বা আদৌ ভারতবাসী মুক্ত হতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’ 

অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আরও বলেন, ‘এখন যেটা দরকার, সেটা হচ্ছে গণমাধ্যমে সর্বোচ্চভাবে প্রচার করা এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং  সংবাদ মাধ্যমের যাদের কারণে সেদিন এনিয়ে ‘অপপ্রচার’ হয়েছিল তাঁদেরকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উপযুক্তভাবে সামাজিক শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা সকলেই জানি যে সুপ্রিম কোর্ট প্রায় হাত তুলে নিয়েছে। কাজেই খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা আমরা করছি না। আমরা মানসিকভাবে আমাদের ঘৃণা উগরে দিচ্ছি। এই অপকর্মের সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত রেখেছিলেন সরকার থেকে শুরু করে গণমাধ্যমসহ সকলেই।’ 

‘আমরা খুব ভালো করেই জানতাম এরমধ্যে একটা দুরভিসন্ধি আছে। সেই দুরভিসন্ধির জাল ছিঁড়ে গিয়ে প্রকৃত সত্য যে সামনে আসছে এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত ভালো লাগার বিষয়’ বলেও অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ মন্তব্য করেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ