ভারতের কেরালায় ঈদুল আজহা পালিত, বাসাতেই নামাজ পড়লেন বাঙালিসহ পরিযায়ী শ্রমিকরা
(last modified Fri, 31 Jul 2020 14:05:52 GMT )
জুলাই ৩১, ২০২০ ২০:০৫ Asia/Dhaka
  • ভারতের কেরালায় ঈদুল আজহা পালিত, বাসাতেই নামাজ পড়লেন বাঙালিসহ পরিযায়ী শ্রমিকরা

ভারতের কেরালা রাজ্যে আজ ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। ভারতের অন্যত্র আগামীকাল (শনিবার) ঈদ পালিত হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আজ কেরালার বিভিন্ন মসজিদে দৈহিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় কুরবানিও সম্পন্ন হয়েছে। যদিও রাজ্যটিতে বাঙালিসহ ভিন রাজ্যের যেসব শ্রমিক রয়েছেন তাদেরকে মসজিদের পরিবর্তে বাসাতেই নামাজ আদায় করতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কেরালায় বাঙালি শ্রমিকদের নেতা ইদ্রিস আলী মণ্ডল আজ (শুক্রবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আজ কেরালাতে ঈদ পালিত হল। গতকাল (বৃহস্পতিবার) এখানকার মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছিলেন, যেখানে করোনা জনিত  ‘রেড জোন’ আছে, ‘কন্টেইমেন্ট জোন’ আছে সেগুলোর কোথাও ঈদের নামাজের জন্য জমায়েত হওয়া যাবে না। বাড়িতে বড়িতেই নামাজ পড়তে হবে। যেসব এলাকা স্বাভাবিক আছে সেসব জায়গাতেও একশ’র বেশি লোক জমায়েত হতে পারবে না। দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখেই  নামাজ আদায় করতে হবে। সেভাবেই নামাজ হয়েছে। ‘রেড জোন’ বেশি হয়েছে ত্রিশুর, মালাপূরম ও পালঘাট জেলায়। এই তিনটি জেলার পরিস্থিতি খারাপ। এছাড়া ত্রিবান্দম রয়েছে। এখানে অনেক জায়গায় নামাজ হয়নি। কেউ কারও সঙ্গে দেখা হচ্ছে না এরকম জায়গাও রয়েছে। যেখানে আমি থাকি সেই পালাঘাট জেলাতেও খুব খারাপ অবস্থা। সরকার যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে সেভাবেই সবাই ঈদ পালন করেছে। আমরা ঘরে বসেই ঈদ পালন করেছি। কুরবানি সমস্ত জায়গাতেই ভালোভাবে হয়েছে। রাজ্য সরকার সমস্ত দিক থেকে আমাদের সহযোগিতা করেছে। কেরালায় যত বাঙালি শ্রমিক আছে তাদের সকলের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সহযোগিতা করেছেন।’

ইদ্রিস আলী মণ্ডল

ইদ্রিস আলী মণ্ডল আরও বলেন, ‘কেরালায় বাঙালি ও অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিক যারা আছে তারা ঈদের নামাজ কোনও জায়গায় পড়তে পারেনি। তাদের নিজ নিজ বাসাতেই নামাজ পড়তে হয়েছে। তারা মসজিদে যাওয়ার কোনও সুযোগ পায়নি। প্রশাসনিক নির্দেশ ছিল মসজিদ সংলগ্ন এলাকার একশ’জন নামাজ পড়তে পারবে এবং বাইরের কেউ সেই মসজিদে যেতে পারবে না। সেই সূত্রে কোনও শ্রমিকরাই মসজিদে জামাতে ঈদের নামাজ পড়ার সুযোগ পায়নি। তারা নিজ বাসায় নামাজ আদায় করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা ভিন রাজ্যের শ্রমিক কেরালায় আছি তাদের উপরে সব সময় রাজ্য সরকার খেয়াল রেখেছে। কেউ অসুস্থ হলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাসহ যা কিছু প্রয়োজন সরকার তার পূর্ণ সহযোগিতা করছে।’

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মুসলিম নেতৃবৃন্দ সরকারি বিধিনিষেধ মেনে ঈদের নামাজ আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কোলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুল গণি বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে  লড়াইয়ে আমাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।  সেজন্য ঈদুল আজহায় বাড়িতে থেকে নামাজ পড়তে রাজ্যের ষাট হাজার মসজিদে নোটিস পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং ব্লক অফিসের মাধ্যমে তা প্রত্যেক মসজিদে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কোনও ময়দানে বা ইদগাহে ভিড় করে নমাজ পড়া যাবে না।’

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহাসিক নাখোদা  মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাশেমি বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের বিধি মেনে মসজিদে  নামাজ হবে।  সকলকে অনুরোধ, মসজিদে ভিড় করবেন না। শিশু এবং বয়স্করা বাড়িতে থেকেই নমাজ আদায় করুন। মসজিদে  দূরত্ব-বিধি মেনে চলাসহ অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসবেন।’ তিনি সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার  রাখার পরামর্শও দিয়েছেন।

কোলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের পক্ষ থেকে হাফিজ হারুণ রশিদ বলেন, ‘ঈদের নামাজে একসঙ্গে ২৫ জনের বেশি ঢুকতে দেওয়া হবে না। নমাজ পড়ার সময়ে অবশ্যই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।’

কোলকাতার রেড রোডের ঈমামে ঈদায়েন কারী ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিজেরা সচেতন হলেই এই মহামারীকে পরাজিত করতে পারি। সেজন্য সকলকে বলতে চাই, যাঁরা অসুস্থ এবং প্রবীণ, তারা বাড়িতে থেকে নামাজ আদায় করুন। মসজিদে ভিড় করবেন না।’

ফুরফুরা দরবার শরীফের পক্ষ থেকে পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীও গত ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবার ঈদুল আজহাতেও বাসায় থেকে পালন করার অনুরোধ জানিয়েছেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/এআর/৩১

ট্যাগ