পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলিমদের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি: ওয়াইসি
ভারতের মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলিমদের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি।’ ‘আজতক’ হিন্দি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) ওয়াইসির মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারকে টার্গেট করে ওয়াইসি বলেন, ‘রাজ্যে কেন এত নিরক্ষরতা, কেন শিক্ষার হার নেমে এসেছে? ১০০ জন মুসলিমের মধ্যে মাত্র ৩ জন মুসলিম স্নাতক কেন? তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দল বিজেপি’র ভয় দেখিয়ে মুসলিম ভোট নিতে চায়। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার যদি মুসলিমদের পক্ষে কাজ করে থাকে তাহলে বিজেপি কীভাবে বাংলায় ১৮ টি লোকসভা আসনে জিতেছে?’
ভারতের বিহারে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে ওয়াইসির ‘মিম’ দল ৫ আসনে জয়ী হয়েছে। একইসঙ্গে বেশকিছু আসনে নির্বাচনী ফলের অভিমুখ পরিবর্তন করে দেওয়ার ফলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘এনডিএ’ সুবিধা পেয়েছে এবং কংগ্রেস-আরজেডি নেতৃত্বাধীন ‘মহাজোট’ ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ‘মিম’কে ‘ভোট কাটা দল’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ‘মিম’ দল মাঠে নামার ঘোষণা দেওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্নমহলে প্রশ্ন উঠেছে ‘মিম’ দল কী বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ভোট বিভাজনে সমর্থ হবে? এরফলে বিজেপি কী তাহলে বিশেষ সুবিধা পাবে? এমনটি হলে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারের পক্ষে তা আশঙ্কার এবং একইসঙ্গে বিজেপি’র ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছে।
বিহার নির্বাচন প্রসঙ্গে ‘মিম’ প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘কংগ্রেস দল কখনই তার ভুলগুলোর দিকে মনোযোগ দেয় না। যদি এমনটাই থেকে যায় তবে ওই দল শেষ হয়ে যাবে। আমরা বিহারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলাম। বিহারের সীমাঞ্চলে কেউ প্যারাসুট থেকে নেমে আসেনি। আমরা সেখানে কাজ করছিলাম। এমন পরিস্থিতিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারপন্থিদের উচিত আমাদের বিজয় নিয়ে প্রশ্ন না করা। একইসঙ্গে জনগণের রায়কে স্বীকার করে নেওয়া উচিত।’
ওয়াইসি আরও বলেন, ‘৮ মাস আগে জোটের জন্য দু’জন শীর্ষ আরজেডি নেতার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি নির্বাচনে কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন? আপনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত নয়। এরপরে আমার দলের নেতারা পাটনায় গিয়ে আরজেডি নেতাদের সাথে সাক্ষাতও করেছেন। তারা বিহারের বিশিষ্ট আলেম ও সমাজকর্মীদের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন যে আমাদের জোটে আসতে দিন, পরে ভোট বিভাজনের হওয়ার কথা বলবে না। কিন্তু এই লোকেরা এখন কাঁদছে কেন?’
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে ‘মিম’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও মুখপাত্র আসিম ওয়াকার বলেছেন, ‘আমরা বিজেপিকে পরাজিত করতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলে একসঙ্গে এগোতে চান, দরজা খোলা রয়েছে। দিদিকেই তাঁর পথ বেছে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের ২২টি জেলায় কাজ শুরু করে দিয়েছি। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে ঝাঁপাব আমরা। কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি এই রাজ্যের নেতৃত্বও মুসলিমদের ধোঁকা দিয়েছেন। তাঁদের কর্মসংস্থান, সংরক্ষণ, জমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রচারের অন্যতম বিষয় হবে।’
ওয়াইসি’র ঘনিষ্ঠ হায়দরাবাদের নেতা এবং দলটির বিধান পরিষদের সদস্য সৈয়দ আমিন জাফারী বলেন, ‘বিষয়টি বাংলা-উর্দুর নয়। সামগ্রিকভাবে মুসলিম সমাজের বঞ্চনার। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রত্যেক জেলায় আমাদের সংগঠন রয়েছে। সেখান থেকেই নিয়মিত খবর পাই যে, সংখ্যালঘু সমাজকে বঞ্চিত করে তাদের বোকা বানিয়ে ভোট কেনা হয়।’
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টার পিছনে কারও নির্দিষ্ট স্বার্থ রয়েছে, এটা স্পষ্ট। ওয়াইসিকে লোকসভায় আমি কাছ থেকে দেখেছি। তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা সম্পর্কে আমি জানি।’ বাংলায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে একদল উর্দুভাষী, অন্য দল বাংলাভাষী। এঁদের কোনও পক্ষেই ওয়াইসির কোনও পরিচিতি নেই বলেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এমপি মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের অধ্যাপক মফিকুল ইসলাম আজ (বৃহস্পতিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘বিহারে মিমের যে ফল তা দেখে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমরা মুসলিমদেরও সহ্য করতে পারে না। তার কারণ হচ্ছে যে, মুসলিমরা সেক্যুলারিজমের বোঝাটা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। এবং কিছু অমুসলিমও আছেন যারা খুব সেক্যুলার। মুসলিমরা বিশেষ করে বেশি সেক্যুলার। তার কারণ হচ্ছে, তারা এধরণের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দেয়নি, বিশেষকরে স্বাধীনতার পরে। কিন্তু এখন ‘মিম’ ঢুকলে যে বিজেপি’র লাভ হয়ে যাবে বলে যা বলা হচ্ছে তা কী ঠিক? কারণ মিম পশ্চিমবঙ্গে আসার আগেই তো গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন পেয়েছিল। এবং অনেকগুলো আসনে যেখানে তারা হেরেছে ওরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল।’
অধ্যাপক মফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে এর আগের বারে বিজেপি মাত্র ৯৮ হাজার ভোট পেয়েছিল। কিন্তু বিগত লোকসভা নির্বাচনে তিন লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে গেছে। ‘মিম’ পশ্চিমবঙ্গে আসা তো পরের ব্যাপার। বিজেপি’র সুবিধা হয়ে যাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের লোকেরাও তো দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে। এটাও তো খুব দেখা যাচ্ছে। যার যেখানে সুবিধা হচ্ছে, সে সেখানে ঝাঁপ মেরে যাচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে কেউ নির্দল হয়ে গেল। ভোটারদেরকে তো আর কেউ কিনে রাখেনি। সব দল যদি বলে এখান বিজেপিবিরোধী সরকার গড়ব তাহলে সবাই একসঙ্গে যৌথভাবে লড়ুক না। বিহারে ৩ টা জোট হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে ৩ টা জোট না করে এখানে বিজেপি থাকুক এবং অন্যসব দল মিলে বিজেপি বিরোধী জোট হোক। তাহলে দেখা যায় বিজেপি’র সঙ্গে পারা যায় কী না।’ কিন্তু সিপিএম, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল কেউই নিজেদের জায়গা ছাড়তে প্রস্তুত নয় বলেও অধ্যাপক মফিকুল ইসলাম মন্তব্য করেন। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।