উত্তর প্রদেশে দেওবন্দের নাম পরিবর্তন করার দাবি জানাল বজরং দল
ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে আলীগড়ের নাম পরিবর্তন করে হরিগড় এবং মঈনপুরীকে মায়ান নগর করার প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরে, ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী কর্মীরা এবার দেওবন্দ নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে ওই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে রয়েছে প্রসিদ্ধ ইসলামী মাদ্রাসা যা দেওবন্দ মাদ্রাসা নামে সুপরিচিত। উগ্রহিন্দুত্ববাদী বজরং দলের পশ্চিম উত্তর প্রদেশ ইউনিট ওই বিষয়ে উত্তর প্রদেশের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী আশুতোষ ট্যান্ডনকে চিঠি পাঠিয়েছে।
পশ্চিম উত্তর প্রদেশের বজরং দলের আহ্বায়ক বিকাশ ত্যাগী বলেন, ‘দেওবন্দের পরিচিতি আগে মাতা বালা সুন্দরী দেবী মন্দিরের সঙ্গে ছিল, ইসলামিক মাদ্রাসার নয়। মহাভারতের সময়ে পাণ্ডবরা এখানে নির্বাসনে কাটিয়েছিলেন। উত্তর প্রদেশ সরকার মুঘল মহত্ত্বের নাম মুছে দিচ্ছে এবং দেওবন্দকে এখন দেভবৃন্দ নামে পরিচিত করা উচিত।’

এ প্রসঙ্গে আজ (বৃহস্পতিবার) ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন খুব সন্নিকটেই। বিগত বছরগুলোতে মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যকে ‘উত্তম প্রদেশ’ থেকে ‘অপরাধ প্রদেশ’-এ পরিণত করেছে। তারা উন্নয়নে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ –এর স্লোগান (সকলের জন্য সবার উন্নয়ন) এক মহাপ্রহসনে পরিণত হয়েছে। করোনা রোগীরা অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করে মারা গেছে। মৃত্যুর পরে তাঁদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাহ পর্যন্ত করতে উত্তর প্রদেশ সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মৃতদেহগুলোকে সেতুর উপর থেকে নীচেয় নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আবার হাজার হাজার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও লাশগুলোকে নদীর চরে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। এই অপদার্থ একটি সরকার আবার পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য বিজেপি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা গোটা দেশজুড়ে আবার একটা ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করতে চাচ্ছে। সেই জন্যই দেওবন্দের মতো একটি প্রাচীন শহর যেখানে দারুল উলুম মাদ্রাসা আছে এবং এই দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার জন্য গোটা বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে দেওবন্দ নামটি। ফলে এরকম প্রাচীন ঐতিহাসিক নামগুলোকে তারা হিন্দুকরণ করতে চাচ্ছে। একটা এক নির্লজ্জ পদক্ষেপ। আমরা আশা করছি যে যোগি সরকারের এই নির্লজ্জ পদক্ষেপকে উত্তর প্রদেশের জনগণ মানবে না। এবং খুব শিগগিরি যোগি সরকারের পতন অনিবার্য এবং মানুষ তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেবে।’
‘গত প্রায় পাঁচ বছরে তারা যেভাবে প্রশাসনকে পরিচালনা করছে তাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, সেজন্য ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না। এবং তার শাস্তি তাদেরকে ভোগ করতে হবে’ বলেও ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান মন্তব্য করেন।
এরআগে ২০১৭ সালে বিজেপি বিধায়ক কুনওয়ার ব্রিজেশ সিং দেওবন্দের নাম পরিবর্তনের দাবি জানান।এবার বজরং দলের পশ্চিম উত্তর প্রদেশের প্রদেশ আহ্বায়ক বিকাশ ত্যাগী ওই দাবি জানালেন। তিনি বলেন, দারুল উলুমের ইতিহাস মাত্র ১০০ বা ১৫০ বছরের পুরনো, যা ইতিহাসেও লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু উত্তর প্রদেশ সরকার যেভাবে মুঘল যুগের স্থানগুলোর নাম পরিবর্তন করে মহাপুরুষদের নামে রেখেছে, তেমনি খুব শিগগিরি দেওবন্দের নাম পরিবর্তন করে দেভবৃন্দ রাখা উচিত।
বিকাশ ত্যাগী বলছেন যে বেশ কয়েকবার সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তারপরে সরকার ওই বিষয়ে একটি রিপোর্টও চেয়েছে। আশা করা হচ্ছে যে শিগগিরি রাজ্য সরকার দেওবন্দের নাম পরিবর্তন করে দেভবৃন্দ করবে।
আগেই বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে আলীগড়ের নাম পরিবর্তন করে হরিগড় রাখার প্রস্তাব পাশ হয়েছে। গত (সোমবার) নবগঠিত আলীগড় জেলা পঞ্চায়েতের বৈঠকে ওই প্রস্তাব পাশ হয়। অন্যদিকে, মঈনপুরী শহরের নাম পরিবর্তন করে মায়ান নগর করার প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।