১৭ কৃষকের মুক্তির পর অবরোধ প্রত্যাহার
হরিয়ানায় আন্দোলনরত কৃষকদের উপরে পুলিশের লাঠিচার্জ, তীব্র প্রতিক্রিয়া কংগ্রেসের
ভারতের হরিয়ানায় পুলিশ লাঠিচার্জ করায় আন্দোলনরত প্রতিবাদী কৃষকরা আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ওই ঘটনাকে জেনারেল ডায়ারের আচরণের সঙ্গে তুলনা করেছে।
কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, ‘আরও একবার কৃষকদের রক্ত ঝরল। লজ্জায় ভারতের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’ কৃষকরা কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন।
গতকাল (শনিবার) বিজেপিশাসিত হরিয়ানার কারনালে বস্তারা টোল প্লাজার কাছে জাতীয় সড়কে জড়ো হয়েছিলেন প্রতিবাদী কৃষকরা। ওই পথ দিয়েই এদিন বিকেলে একটি রাজনৈতিক সভায় হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা মনোহরলাল খাট্টারের যাওয়ার কথা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির অন্য নেতার কনভয় রুখে দেওয়ার লক্ষ্যে কৃষকরা কালো পতাকা নিয়ে রাস্তায় ভিড় জমান এবং টোল প্লাজা অবরোধ করে বিজেপি-বিরোধী স্লোগান দেন। এ সময়ে কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যাপকভাবে লাঠিচার্জ করলে রক্তাক্ত অবস্থায় আহত হন কৃষকরা। ওই ঘটনার ছবি ও ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই কৃষকরা রাজ্যের হিসার, সিরসা, ফতেহাবাদ, ভিওয়ানি, জিন্দ, রোহতক, আম্বালা, কার্নাল, পানিপথ, সোনিপথসহ সমস্ত জেলায় জাতীয় মহাসড়ক এবং টোল প্লাজা অবরোধ করেন। এরফলে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবশেষে গ্রেফতার হওয়া ১৭ জন কৃষককে পুলিশ মুক্তি দেওয়ার পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা নাগাদ টোল প্লাজা থেকে অবরোধ প্রত্যাহার শুরু হয়।

হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ভূপিন্দর সিং হুদা বলেন, ‘বর্বরোচিত আক্রমণ। বিজেপি’র সভাস্থল থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষকরা। তাঁদের উপরে যেভাবে আক্রমণ হল, তার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার।’
ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা গুরনাম সিংহ চাধুনি বলেন, ‘সরকার যদি কৃষকদের কাছে এসে কথা না বলে, অনির্দিষ্টকাল ধরে অবরোধ চলবে। তাঁর কথায়, ‘দরকার হলে আমরা রাস্তাতেই মরব। কিন্তু দেশকে বেচতে দেব না।’
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র ও মহাসচিব রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘বিজেপি-জেজেপি’র 'কাপুরুষোচিত সরকার' কারনালে অন্নদাতাদের উপর নির্মম ও বর্বরভাবে লাঠিচার্জ করে 'জেনারেল ডায়ার’-এর কথা মনে করিয়ে দিল। এটা সম্পূর্ণ স্পষ্ট যে খাট্টার সরকার কৃষকদের সাথে জেনারেল ডায়ারের মত আচরণ করছে। প্রথমে মোদি-খাট্টার সরকার কেন্দ্রীয় তিনটি কালো আইন দিয়ে কৃষিকে হত্যা করেছিল, এখন বিজেপি-জেজেপি সরকার কৃষকদের রক্ত ঝরাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কৃষকরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিল, তাদের পশুর মতো মারধর করা হয়েছে। কয়েক ডজন কৃষকের রক্ত ঝরেছে এবং কয়েকশ আহত হয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মোদি এবং খাট্টার সরকার ক্রমাগত আক্রমণ করেছে এবং কৃষক-মজুরের বুকের রক্ত ঝরিয়েছে। ২৫ নভেম্বর যখন কৃষকরা গান্ধীবাদী উপায়ে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তারা আম্বালা, সিরসা, পালওয়াল এবং রাজস্থান সীমান্তে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা খনন করে, ঠাণ্ডা পানির কামান চালিয়ে, টিয়ার গ্যাসের শেল ব্যবহার করে, কৃষকদের লাঠি দিয়ে আঘাত করে তাদের পথ বন্ধ করে দেয়। গত ৯ মাসে আম্বালা, কালকা, পিপলি, কার্নাল, জিন্দ, পালওয়াল, রেওয়াড়ি, রোহতক, হিসার, সিরসা এবং রাজ্যের প্রত্যেক প্রান্তে বিজেপি-জেজেপি সরকার কৃষকদের কণ্ঠরোধ করতে পুলিশের লাঠি ব্যবহার করেছে। কিন্তু এসবে কণ্ঠ রোধ করা যায়নি।’
কংগ্রেসের মহাসচিব প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বলেছেন, ‘কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে ক্ষেতে বেড়ে ওঠা ফসল দেয়। বিজেপি সরকারের কাছে নিজেদের অধিকার দাবি করলে তাদের লাঠি দিয়ে রক্তাক্ত করে।’
‘কৃষকদের উপরে আঘাত করা প্রত্যেকটি লাঠি বিজেপি সরকারের কফিনে পেরেক হিসেবে কাজ করবে’ বলেও কংগ্রেসের মহাসচিব প্রিয়াঙ্কা গান্ধি মন্তব্য করেছেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।