পরমাণু ইস্যুতে ইরানের ব্যাপারে ব্লিঙ্কেনের স্বীকারোক্তি তাদের পরাজয়ের প্রমাণ
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন স্বীকার করেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে আমেরিকা বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়েছে। তিনি গতকাল ভিয়েনায় ইরানের পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবনের সপ্তম দফা আলোচনা শেষ হওয়ার পর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, কূটনৈতিক পন্থায় ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধান সবার জন্যই কল্যাণকর।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সময় পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওয়াশিংটনের একঘরে হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করলেন যখন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ কথা অস্বীকার করতেন। ট্রাম্প সবসময়ই পরমাণু সমঝোতাকে ওয়াশিংটনের জন্য সবচেয়ে জঘন্য চুক্তি বলে অভিহিত করতেন এবং ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক সমাজের তীব্র বিরোধিতা সত্বেও ২০১৮ সালের ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তার এ পদক্ষেপ ছিল জাতিসংঘে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের লঙ্ঘন। এরপর ট্রাম্প অযৌক্তিক কিছু দাবি দাওয়া তুলে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির জন্য দেশটির বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ও মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক প্রভাব সীমিত করাসহ ১২টি প্রস্তাব মেনে নিতে তেহরানকে বাধ্য করা।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার শাসনামলে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তিনি ইরানের ব্যাপারে একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেননি। ইরান নিজস্ব শক্তি সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করে আসছে। আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় পরমাণু সমঝোতার অপর দেশগুলো ওয়াশিংটনের তীব্র সমালোচনা করে এবং আলোচনার জন্য গঠিত পাঁচ যোগ এক গ্রুপ চার যোগ এক গ্রুপে পরিণত হয়। এমনকি ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররাও আমেরিকার সমালোচনা করে। ফলে ইরান ইস্যুতে বিশ্ব অঙ্গনে কার্যত একঘরে হয়ে পড়ে ওয়াশিংটন।
যাইহোক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বীকারোক্তি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার শাসনামলের শেষ দিন পর্যন্ত ইরানের ব্যাপারে একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি যা কিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আমেরিকার কোণঠাসা হয়ে পড়ার ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের স্বীকারোক্তি থেকে প্রমাণিত হয় ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু তারপরও ওয়াশিংটনের অন্যায় দাবি মেনে নিতে তেহরানকে বাধ্য করার জন্য বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইরান তার অবস্থানে অটল রয়েছে এবং পাশ্চাত্যকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নিতে হবে। এমনকি সত্যিই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলো কিনা তা যাচাই বাছাই করার পরই তেহরান পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসবে।# পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।