ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মস্কো সফর: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গিকার
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান সঠিক পথে তেহরান-মস্কো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরো জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি গতকাল মস্কোয় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে সাক্ষাতে দু'দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে এ ক্ষেত্রে বিরাজমান বাধা দূর করে এ সহযোগিতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদিও দীর্ঘকাল ধরে নানা ক্ষেত্রে ইরান-রাশিয়া সম্পর্ক ও সহযোগিতা খুবই ঘনিষ্ঠ কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর কারণে আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তেহরান-মস্কো সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এ কারণে দুদেশের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের সফর বিনিময় বেড়েছে এবং আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে দুই দেশ অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
মার্কিন সরকার এক মেরুকেন্দ্রিক বা একক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার যে চেষ্টা করছে ইরান ও রাশিয়া তার তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। দুই দেশই পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সরিয়ে নেয়া এবং উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের মোকাবেলা করার ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা কঠোর নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় তেহরান-মস্কো সামরিক সহযোগিতাকে জোরদার করেছে। যেহেতু দুই দেশই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন সে কারণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য তারা বহু রকমের পদক্ষেপ নিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরে ইরান, রাশিয়াসহ আরো কিছু দেশ মিলে 'ওপেক গ্যাস' সংস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে নিজেদের যৌথ স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া, ইরান ও রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা চুক্তিতে সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এ সংক্রান্ত খসড়া তৈরির কাজ চলছে। দুই দেশই ডলারের পরিবর্তে এবং অর্থ স্থানান্তর বিষয়ক সুইপ্ট ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে যাতে দুই দেশই পশ্চিম নিষেধাজ্ঞার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারে।
সম্প্রতি দুই দেশ রিয়াল ও রুবলের মাধ্যমে বাণিজ্যের বিষয়ে সমঝোতায় উপনীত হয়েছে। এ ছাড়া, দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য করিডোর চালুর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্প চালু হলে ইরানের চবাহার ও বন্দর আব্বাস থেকে শুরু করে মস্কো হয়ে ফিনল্যান্ড পর্যন্ত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হবে। এ ব্যাপারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার উত্তর-দক্ষিণ করিডোর চালুর বিষয়টি তেহরানের কাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
এ ছাড়া, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোটেও এই দুই দেশ সক্রিয় রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেয়া সাক্ষাতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় ইরানের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের বিষয়ে মস্কোর সমর্থন রয়েছে এবং ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নে ইরানের সদস্যপদকেও রাশিয়া সমর্থন করে ।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাশিয়া ও ইরানের সম্পর্ক দিন দিন ঘনিষ্ঠ হচ্ছে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বহু বিষয়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রাশিয়া সফরকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে তিনি ইউরোপীয় এক নেতার বার্তা নিয় মস্কো সফরে যাওয়ায় তার এ সফরের গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।