সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম দিবসে দাম্ভিক শক্তিগুলোকে আবারও যে বার্তা দিল ইসলামী ইরান
(last modified Fri, 04 Nov 2022 14:40:53 GMT )
নভেম্বর ০৪, ২০২২ ২০:৪০ Asia/Dhaka
  • তেহরানে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম দিবসের সমাবেশে বিপ্লবী ইরানি নারীদের একাংশ
    তেহরানে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম দিবসের সমাবেশে বিপ্লবী ইরানি নারীদের একাংশ

আজ ঐতিহাসিক চৌঠা নভেম্বর। এ দিবসটি ইরানে পালিত হয়  দাম্ভিক শক্তিগুলো তথা বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের জাতীয় দিবস হিসেবে।

ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার পর থেকেই প্রতি বছর পালন করা হচ্ছে এ দিবস। আজও গোটা ইরানের উল্লেখযোগ্য ছোটো-বড় সব শহরে তথা তেহরান ছাড়াও ৯০০ শহরে কয়েক মিলিয়ন মানুষ এ দিবসের শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। রাজধানী তেহরানে এ দিবসের শোভাযাত্রায় সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণের মাত্রা ছিল গত বেশ কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

ইসলামী ইরানে এ দিবস ছাত্র-দিবস নামেও পরিচিত। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাসের তিনটি বেশ বড় ঘটনার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ দিবসের সঙ্গে।

প্রথমত ১৯৬৪ সালের এ দিনে ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও রাষ্ট্রের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনীকে তৎকালীন স্বৈরশাসক ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রধান আঞ্চলিক তাবেদার তথা ইরানের শেষ রাজা রেজা শাহ পাহলভী তুরস্কে নির্বাসনের নির্বাসনের নির্দেশ দেন। রেজা শাহের দৃষ্টিতে ইমামের অপরাধ ছিল এটা যে তিনি ক্যাপিচুলেশন নামক আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন যে আইন অনুযায়ী মার্কিন নাগরিকরা ইরানে যত বড় অপরাধই করুক না কেন ও যার বিরুদ্ধেই করুক না কেন তাদের বিচার করা যাবে না! ইমাম খোমেনী বলেছিলেন এই আইনের মাধ্যমে শাহ ইরানি জাতিকে মার্কিন কুকুরদের চেয়েও নিচে নামিয়ে দিয়ে ইসলাম ও ইরানের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন! এ বছর ইমামের বিপ্লবী তৎপরতা ইরানি জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় শাহ ওই নির্বাসনের মাধ্যমে তার আন্দোলনকে সীমিত করতে চাইলেও তা বুমেরাং হয়।

দ্বিতীয়ত: ১৯৭৮ সালের এই দিনে শাহের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র বিক্ষোভ ও ধর্মঘট ডাকা হয় এবং তেহরানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তেহরানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সমাবেশ ও বিক্ষোভ দমন করতে এ দিনে শাহের সশস্ত্র বাহিনী গুলি চালিয়ে ৫৬ জন তরুণ ও যুবক ছাত্রকে শহীদ করে ও আরও অনেকে আহত হয়। ওই ঘটনার পর ইরানে ইসলামী বিপ্লব আরও বেগবান হয়ে ওঠে। এ দিবসকে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ইতিহাসে ছাত্র দিবস হিসেবেও পালন করা হয়।

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এক বিক্ষোভকারী নারীর পোস্টারে ব্যাঙ্গ কার্টুনে তাকফিরি সন্ত্রাসীদের প্রতি মার্কিন মদদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে

 

তৃতীয়ত: ১৯৭৯ সালের এ দিনে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর বিপ্লবী ছাত্র সমাজ ইরানসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও গুপ্তচরবৃত্তির আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত তেহরানস্থ মার্কিন দূতাবাস দখল করে নিয়ে ও কূটনীতিকের ছদ্মবেশধারী মার্কিন গুপ্তচরদের আটক করে ইরানে মার্কিন শক্তির প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ও নাশকতার পথ চিরতরে বন্ধ করে দেন। ইমাম খোমেনী (র) ছাত্রদের এ পদক্ষেপকে দ্বিতীয় বিপ্লব ও এমনকি প্রথম ইসলামী বিপ্লবের চেয়েও বড় বিপ্লব বলে অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ইরানে এ দিবস ইয়াওমুল্লাহ বা আল্লাহর দিবস নামেও বিখ্যাত। ইরানের বিপ্লবী ছাত্ররা ৫৪ জন মার্কিন গুপ্তচরকে ৪৪৪ দিন আটক করার পর বেশ বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় ও ইরানের ঘরোয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার আদায়ের প্রেক্ষাপটে মুক্তি দেন। এ ঘটনা বিশ্বে ইসলামী শক্তির অদম্য উত্থান ও আধ্যাত্মিক-রাজনৈতিক গৌরবময় প্রকাশ হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। 

এ দিনের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো, বিশেষ করে তৃতীয় ঘটনাটি প্রমাণ করেছে যে মার্কিন পরাশক্তি অপরাজেয় নয় বরং ভঙ্গুর। পাশ্চাত্য ও পশ্চিমাপন্থী অনেকে এ ঘটনার কারণেই মার্কিন সরকার ইরানের সঙ্গে তীব্র শত্রুতা শুরু করে বলে প্রচার করলেও বাস্তবে ইরানের সঙ্গে মার্কিন সরকার তীব্র শত্রুতা শুরু করে ১৯৫২ সালের ১৯ আগস্ট জাতীয়তাবাদী মোসাদ্দেক সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে। তেল সম্পদ জাতীয়করণের ক্ষুব্ধ ব্রিটেনও এ ষড়যন্ত্রে মার্কিন সরকারের সহযোগী হয়েছিল। 

যাই হোক আজকের ব্যাপক গণমিছিল ও শোভাযাত্রা প্রমাণ করেছে যে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানে জাতিগত দাঙ্গা ও সড়ক দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত মার্কিন-ইসরাইলি ও পশ্চিমা শক্তিগুলো এবং তাদের অনুচর আঞ্চলিক সরকারগুলো সর্বশক্তি নিয়োগ করে ইসলামী ইরানকে তাদের দাসত্বের নিগড়ে ফিরিয়ে আনার যে দুঃস্বপ্ন দেখছে তা দুঃস্বপ্নই থেকে যাবে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/৪             
 

ট্যাগ