ইরানী নারীদের সম্পর্কে পশ্চিমা প্রচারণা
ইউটিউব ১১ বছর পর আমার চ্যানেল মুছে দিয়েছে: প্রেস টিভি'র উপস্থাপক
পার্সটুডে-"প্রেস টিভি" চ্যানেলের প্রযোজক ও উপস্থাপক "মারওয়া ওসমান" বলেছেন: মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিগত বছরগুলোতে অনেক ওয়েবসাইট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ কিংবা মুছে দিয়েছে। এই বিধিনিষেধ প্রয়োগের কারণ হল পশ্চিমা মিডিয়ার সঙ্গে আমাদের বর্ণনার পার্থক্য।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ লেবাননের মিডিয়া স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক সংবাদ সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলোর ব্যাপারে তার আগ্রহ সম্পর্কে বলেছেন: আমি ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রগুলো অনুসরণ করি। আমি জানার চেষ্টা করি যে দেশটি ৪৫ বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে সেই দেশটি কীভাবে চলছে। আমার মতে এই দেশের জনগণ একটি দুর্দান্ত কাজ করেছে। বিশেষ করে গত ৫ বছরে আমরা পশ্চিমা বিকল্প মিডিয়াগুলোর সাথে ইরানের সম্পর্কের অগ্রগতি দেখেছি।
তিনি গণমাধ্যমের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বলেন: পশ্চিমা গণমাধ্যমের দর্শকদের জন্য ইরান সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। ২০১৭ সালে আমি তেহরানে ফিলিস্তিন বিষয়ক একটি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলাম। সেই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো যে বিষয়টি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তা হল গাজার জন্য ইরানি জনগণের প্রকৃত, সচেতন এবং অবিচ্ছিন্ন সমর্থন। আমরা আরবদের কাছ থেকে এরকম সমর্থন খুব কমই দেখতে পাই। দীর্ঘদিন ধরে আমি ভেবেছিলাম এ অঞ্চলের খুব কম দেশই এখনও ফিলিস্তিনীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। কিন্তু যখন আমি তেহরান সফরে গেলাম, দেখলাম ইরানের ইতিহাস ফিলিস্তিনীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অভিন্ন। জনগণের সাথে কথা বলার সময় আমি বুঝলাম যে কেন গাজা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আসলে তারা ফিলিস্তিনের মুক্তির মাঝে তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তি দেখে।
প্রেস টিভির উপস্থাপক ইরানে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন:
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ইরানে প্রথম যে বিষয়টি আমাকে অবাক করেছিল তা হল সমাজ ও সরকারে নারীদের ভূমিকা। এর আগে আমি তেহরানে নারীদের জীবনযাপন এবং আচরণ সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়ার প্রচারণায় প্রভাবিত ছিলাম। এটি আমার জন্য অপ্রত্যাশিত একটি সাংস্কৃতিক ধাক্কা ছিল কারণ লেবাননের সংবিধান এমন লোকদের দ্বারা পরিচালিত হয় যারা নির্বাহী দায়িত্বে একজন মহিলার উপস্থিতিকে আপত্তিকর বলে মনে করে।
তিনি আরও বলেন: আমি মনে করি বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে তেহরানের সংযুক্ত হবার উপায় রয়েছে। ইরান কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও আমাদের অবশ্যই মিডিয়া কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্বের জনগণকে এই দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রকৃত অবস্থার কথা জানিয়ে দেওয়া কর্তব্য।
বিশ্বব্যাপী বাক স্বাধীনতার চরম অভাবের কথা উল্লেখ করে ওসমান বলেন: সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেন্সরশিপ ছাড়া আর কোনো বাধা নেই। উদাহরণস্বরূপ ১১ বছর ধরে আমি আমার YouTube চ্যানেল চালাচ্ছি। কিন্তু যখন প্রেস টিভিতে আমার প্রোগ্রামের আর্কাইভ নিয়ে এলাম, তখনই কোনোরকম পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সেসব মুছে ফেলা হলো। এই প্রোগ্রামগুলো ছিল মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার ঘটনা নির্ভর। বিগত বছরগুলোতেও মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ বহু ওয়েবসাইট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ অথবা সরিয়ে দিয়েছে। এই বিধিনিষেধ প্রয়োগের কারণ হল আমাদের দেওয়া তথ্য এবং পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য। যাই হোক, আমরা সঠিক পথে আছি। আমাদের সাংস্কৃতিক বাধাগুলো ভেঙে ফেলতে হবে এবং বিশ্বজুড়ে সেন্সরশিপ বাইপাস করার জন্য নয়া বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি আরও বলেন:
আমি মনে করি আমরা পশ্চিমা দর্শকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি এবং তাদেরকে আমরা আমাদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি। এটা একটা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে পুরোপুরি বোঝার বা জ্ঞানের অভাবের কারণে ঘটেছে। আমরা বিদেশী দর্শকদের জন্য আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিকে সুন্দর করে তুলে ধতে পারি।
সবশেষে প্রেস টিভির উপস্থাপক একটি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন: আমি যদি আমাকে এবং আমার পরিবারকে হত্যা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাজেট করা তহবিল সম্পর্কে পশ্চিমা দেশগুলোর জনগণের সাথে কথা বলতে চাই, বেশিরভাগ আমেরিকানই শুনবে না, গুরুত্ব দেবে না। কিন্তু তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি ভাল অবকাঠামো তৈরি করার পরিবর্তে কীভাব তারা ট্যাক্সের অর্থ খরচ করে তা নিয়ে বললে শুনবে।#
পার্সটুডে/এনএম/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।