মে ২৪, ২০২৪ ১৮:৪২ Asia/Dhaka
  • সাদ্দামের পাশে ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর এমকেও\\\\\\\'র প্রাক্তন নেতা \\\\\\\'মাসুদ রাজাভি\\\\\\\'
    সাদ্দামের পাশে ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর এমকেও\\\\\\\'র প্রাক্তন নেতা \\\\\\\'মাসুদ রাজাভি\\\\\\\'

আয়াতুল্লাহ রায়িসি এবং তার সঙ্গীদের শাহাদাতে সন্ত্রাসীদের খুশি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে তারা যে বিষয়টি বার বার আলোচনায় আনে এবং এখনো ভুলতে পারেনি সেটা হচ্ছে, ১৯৮০'র দশকে মুজাহিদিনে খালক অরগানাইজেশন বা এমকেও নামে পরিচিত ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে আয়াতুল্লাহ রায়িসির কঠোর ভূমিকা।

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ও তার সফর সঙ্গীদের শাহাদাতের ঘটনায় ইরানী জাতির মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আর এ ঘটনায় ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এমকেও'র সন্ত্রাসীরা খুশিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে উল্লাশ প্রকাশ করেছে।

এটা জানা উচিত যে শহীদ আয়াতুল্লাহ রায়িসি সেই সময়ের একজন বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে সন্ত্রাসীদের অপরাধী কর্মকাণ্ড মোকাবেলা করা এবং দোষীদের শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছিলেন। এ কারণে ইরানের শত্রুরা এবং অবশিষ্ট সন্ত্রাসীরা বহু বছর ধরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রায়িসিকে টার্গেটে রেখেছিল এবং একাধিকবার তার ওপর হামলাও চালিয়েছিল।

রাজাভির অনুগত সন্ত্রাসীদের হত্যার গল্প

বিপ্লবের আগে ইরানে যেসব দল ও গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল তাদের মধ্যে 'মুজাহিদিনে খালক অরগানাইজেশন' বা এমকেও ছিল অন্যতম যারা ইরানের সমসাময়িক রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি পরিচিত নাম। এই গোষ্ঠীটি বিপ্লবের আগে ও পরবর্তী সময়ে নাশকতা, সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা, বোমা বিস্ফোরণ প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাও এমন পরিস্থিতিতে যখন পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর এবং ইরানিরা এমকেও সংগঠনের উগ্র চিন্তা, আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে মেনে না নেওয়ায় এই সংগঠনটি তাদের প্রতি জনসমর্থন কম থাকা সত্ত্বেও সশস্ত্র উপায়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল।

এমকেও সংগঠনের প্রধান হিসাবে মাসুদ রাজাভি, ইসলামী প্রজাতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাত করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছিল।

এরমধ্যে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এমন কাজ করা যাতে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার কোনো ভবিষ্যত না থাকে। এর অর্থ ইরানি শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সরকারের অন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দেয়া।

এই পর্যায়ে, ১৯৮১ সাল থেকে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড শুরু হয় এবং পরের বছরের গ্রীষ্ম পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ওই সময়টিতে আমরা ইসলামী প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী অভিযানের ঘটনা দেখেছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান পার্টির সদর দফতরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা, যার ফলে আয়াতুল্লাহ বেহেশতিসহ প্রশাসনের আরো ৭০ জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা শহীদ হন। এমকেও সংগঠনের নেতা 'মাসুদ রাজাভি'  তাদের পরিকল্পিত ওই হত্যাকাণ্ডকে  'চরম আঘাত' বলে অভিহিত করেছিল।

মুজাহেদিনে খালকের সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিস্ফোরণের পর শহীদ বেহেশতি

এই হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় পিপলস মুজাহিদিনে খালক বা এমকেও'র সন্ত্রাসী সংগঠন মরহুম ইমাম খোমেনির বাড়ি ও অফিসে বোমা হামলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে, সন্ত্রাসীদের চেষ্টা অব্যাহত থাকে এবং শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট রাজাঈ ও প্রধানমন্ত্রী বাহোনারকে শহীদ করে।

এমকেও'র সন্ত্রাসী সংগঠন রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার পাশাপাশি, ধর্মীয় নেতাদের হত্যার পথও বেছে নেয়। মসজিদের মেহরাবে জুমার নামাজের পাঁচজন ইমামকে তারা শহীদ করে।

ইরানজুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়ে মার্কিন সমর্থিত এমকেও'র সন্ত্রাসী সংগঠন সদর্ভে ঘোষণা করে, 'ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থার মূলে আমরা চরম আঘাত হেনেছি এবং এখন আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে ইরানজুড়ে নিরাপত্তাহীনতা ও সংকট সৃষ্টি করবো।'

এরই ধারাবাহিকতায় এমকেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতা 'মাসুদ রাজাভি'র নির্দেশ মতো এই গোষ্ঠীর সদস্যরা ইরানের রাস্তাঘাট ও বাজার এলাকায় বহু মানুষকে হত্যা করে। নিত্যপণ্যের বাজার এলাকা ও রুটির দোকান থেকে শুরু করে অসহায় নারী ও শিশুদেরকেও হত্যা করতে তারা ছাড়েনি। তিন বছরের এক মেয়ে শিশুকে তারা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ইসলামি শাসন ব্যবস্থা উৎখাতের জন্য এভাবে তারা ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে একের পর এক চরম নির্মমতা দেখাতে শুরু করে।

এমকেও সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত এক শিশু

তবে, এই সন্ত্রাসী সংগঠন শুধু যে ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে এভাবে একের পর এক তাণ্ডব চালিয়েছে তাই নয়, একই সাথে তারা ইরানের  বিরুদ্ধে সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের কঠিন দিনগুলোতেও সাদ্দামের পাশে দাঁড়িয়েছিল।

তারা সাদ্দামের পক্ষে ইরানের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি করতো এবং ইরানের ভেতরের সমস্ত গতিবিধি ও যাবতীয় তথ্য সাদ্দামকে সরবরাহ করতো। এরপর খুব শিগগিরি তারা ইরাকের সাদ্দাম সরকারের পঞ্চম স্তম্ভ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এমনকি তারা ইরানি যোদ্ধাদের ইউনিফর্ম পরে ইরানি বাহিনীর ভেতরে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং ইরানি যোদ্ধাদের হত্যার চেষ্টা করেছিল। শুধু তাই নয়, মাসুদ রাজাভির সন্ত্রাসীরা সাদ্দামের বিরোধিতাকারী ইরাকি কুর্দিদেরও হত্যা করেছিল।

মাসুদ রাজাভি এবং ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম

ইরাকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময়, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা সাদ্দামের সমর্থনে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছিল এবং সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ করেছিল।

যেমন, 'আফতাব' নামক এক অভিযানের কথা বলা যায়, যার ফলে প্রায় ৩৫০০ লোক হতাহত হয়েছিল এবং তারা ৫০৮ জন ইরানি সৈন্যকে বন্দী করেছিল। এ ছাড়া,  'মেরসাদ' অপারেশনে ৯৭৭ জনকে তারা বন্দী করেছিল। এভাবে বহু ইরানি এই সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ হয়েছিল। সন্ত্রাসীরা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা থেকে শুরু করে রোগীদের মাথা কেটে ফেলা এবং হাসপাতালে আগুন দেওয়া, সন্তানসহ মাকে পুড়িয়ে মারার মতো নানান অবিশ্বাস্য রকমের অপরাধযজ্ঞে জড়িয়ে পড়েছিল।

এছাড়া, ১৯৮৭ সালে মক্কায় ইরানী হাজিদের হত্যায়ও তাদের ভূমিকা থাকার কথা উল্লেখ করা যায়।

এমনই এক কঠিন পরিস্থিতিতে বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ইরানের জনগণকে রক্ষায় শহীদ আয়াতুল্লাহ রায়িসি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি বিচারিক কাজে শক্ত অবস্থান নিয়ে তেহরানে সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেন এবং এ ব্যাপারে ছিলেন জিরো টলারেন্স যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত সন্ত্রাসীরা ইরানের জনগণকে ক্ষতি করতে না পারে। বিশেষ করে সন্ত্রাসীদের প্রধান টার্গেট ছিল রাজধানী তেহরান।

সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির সাথে শহীদ রায়িসির সাক্ষাত

এখন গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি সামনে আসে তা হচ্ছে, পশ্চিমা সরকারগুলো এবং তাদের মিডিয়াগুলো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট রায়িসির কর্মকাণ্ডের প্রশংসা না করে কেন সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে এবং তার চেহারায় কালিমা লেপনের চেষ্টা করছে? কেন তারা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে ঐতিহাসিক সত্যকে ঢাকার চেষ্টা করছে?  এসব করে পশ্চিমাদের কি লাভ?

এমকেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বর্তমান নেতা 'মারিয়াম রাজাভি' এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট 'ডোনাল্ড ট্রাম্প'-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আইনজীবী 'রুডি গিউলিয়ানি'

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

ট্যাগ