জুন ০৯, ২০২৪ ১৩:৫৭ Asia/Dhaka
  • শহীদ আমির আবদুল্লাহিয়ান ছিলেন ফিলিস্তিনসহ এশিয়ার কর্মতৎপর একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
    শহীদ আমির আবদুল্লাহিয়ান ছিলেন ফিলিস্তিনসহ এশিয়ার কর্মতৎপর একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শহীদ হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান আল-আকসা ঝড় অভিযানের শুরু থেকে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আঞ্চলিক প্রচারাভিযানে ও ফিলিস্তিনের পক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তিনি ছিলেন আঞ্চলিক পর্যায়ে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন এবং প্রতিরোধ শক্তির একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে তার কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য ও গতিশীলতা সৃষ্টি করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষায় তার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।

বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা

ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্যের অর্থ হল পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং বিরাজমান সক্ষমতাকে কাজে লাগানো। একইসাথে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নীতির মোকাবেলা করা। শহীদ আমির আবদুল্লাহিয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার জন্য ইরানের কার্যকর শক্তি বৃদ্ধিতে বিশ্বাস করতেন। তার মতে,ইরানের উচিত পারমাণবিক কর্মসূচীকে এগিয়ে নিয়ে আলোচনার টেবিলে দরকষাকষিতে এটাকে কাজে লাগানো।

আমির আব্দুল্লাহিয়ান আজ থেকে তিন মাস আগে সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাতকারে  মার্কিন নীতির সমালোচনা করে বলেছিলেন, "আমেরিকা এবং অনেক পশ্চিমা দেশ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করে।" এ ছাড়া, তিনি ইরানের সাথে আলোচনাকারী পক্ষগুলোর সাথে সবসময় সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক ছিলেন। এরও আগে তিনি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন: "যদি তারা ন্যায়সঙ্গতভাবে কাজ করে তবে আমরা কখনই বলব না যে আমরা সহযোগিতা করব না,তাই প্রতিপক্ষেরই উচিত তাদের নীতি সংশোধন করা।"

প্রতিবেশীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ

শহীদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান প্রতিবেশীসহ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর ভিত্তি করে ইরানের পররাষ্ট্র নীতি সাজিয়েছিলেন। তিনি সংসদে তার মন্ত্রিত্বলাভের বিষয়টি অনুমোদিত হওয়ার পর বলেছিলেন, তাদের সরকার প্রতিবেশী ও এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেবে এবং এও বলেছিলেন, একবিংশ শতাব্দি হবে এশিয়ার। পশ্চিম এশিয়ায় আমরা প্রতিরোধ শক্তির সাফল্য ও অর্জনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই এবং আমরা আমাদের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিস্তারের জন্য পূর্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির সক্ষমতা ব্যবহার করতে চাই।

আমির আবদুল্লাহিয়ান ছিলেন প্রতিরোধ শক্তির সাথে সংযোগ স্থাপনকারী

ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে এই অঞ্চল অগ্রাধিকার পাওয়ায় শহিদ আমীর আবদুল্লাহিয়ান আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে পশ্চিম এশিয়ায় জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালান এবং বহু ক্ষেত্রে তিনি সাফল্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। পশ্চিম এশিয়ার প্রতিরোধ বাহিনী হিসেবে ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার শহীদ কাসেম সোলেইমানির সাথে আব্দুল্লাহিয়ানের সুসম্পর্কের কারণে তিনি আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

ফিলিস্তিনের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন

২০২৩ সালের গাজা যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে শহীদ আমির আবদুল্লাহিয়ান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। তিনি এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা, সাক্ষাৎ, টেলিফোনালাপের পাশাপাশি ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে জরুরি  বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বাস্তবসম্মত সমাধানের উপায় তুলে ধরা  

গত বছর জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের বিশেষ  বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বায়তুল মোকাদ্দাসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা্ণ্ড থেকে ইসরাইলকে বিরত রাখার জন্য ছয়টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করেন। এ প্রস্তাবগুলো ছিলো,

১. জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ থেকে ইসরাইলকে বহিষ্কার করা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এর সদস্যপদ বাতিল করা।

২.গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধ অবিলম্বে বন্ধ করা,গাজা উপত্যকা থেকে সব ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং গাজা উপত্যকার সমস্ত এলাকায় আরও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া।

৩. যারা বসতবাড়ি হারিয়েছে তাদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করা।

৪. গাজা উপত্যকা জুড়ে হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র পুন:স্থাপন করা।

৫. গুরুতর আহতদের এবং শিশু ও মহিলাদের চিকিৎসার জন্য ফিলিস্তিনের বাইরে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।

৬. জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মিশরের সহায়তায় রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট দ্রুত খুলে দেয়া। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ