জাতিসংঘে মাসুস পেজেশকিয়ান
'ইসরাইল প্রকাশ্যে এবং গোপনে দায়েশকে সহযোগিতা দিয়েছে'
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, একটি উন্নত বিশ্ব গড়তে ইরান বিশ্বের শক্তিধর ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কার্যকর ও সমান সম্পর্ক রাখতে প্রস্তুত।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ছয় জাতি গোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত জেসিপিওএ থেকে আমেরিকার প্রত্যাহারের সমালোচনা করে বলেছেন, "ইরান এবং বিশ্ব শক্তিগুলো একটি সুযোগ-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরমাণু সমঝোতা বা জেসিপিওএ-তে পৌঁছেছিল। তেহরান ইরানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং নিষেধাজ্ঞা অপসারণের জন্য পারমাণবিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরের পর্যবেক্ষণ গ্রহণ করেছে। কিন্তু জেসিপিওএ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা প্রত্যাহার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হুমকি-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শক্তি-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে।ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বা আইওইএ'র মাধ্যমে অনুমোদিত জেসিপিও'তে তার সমস্ত প্রতিশ্রুতি মেনে চলছে এই বিষয়টি উল্লেখ করে পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেন যে তেহরান জেসিপিওএ'র সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে প্রস্তুত এবং যদি জেসিপিওএ'র প্রতিশ্রুতিগুলো সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয় তবে অত্যন্ত সরল বিশ্বাসে এটা বলা যায় যে অন্যান্য বিষয়গুলোও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট আমেরিকার জনগণের উদ্দেশে বলেন,
'এটি ইরান নয় যে আপনাদের সীমান্তের পাশে একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে, এটি ইরান নয় যে আপনাদের দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং বিশ্বের সঙ্গে আপনাদের বাণিজ্য সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করেছে। এটি ইরান নয় যে আপনাদের জন্য ওষুধ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এটি ইরান নয় যে আপনাদের বিশ্বের ব্যাংকিং এবং মুদ্রা ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। এটা ইরান নয় যে আপনাদের সেনাপ্রধানদের হত্যা করেছে বরং আমেরিকাই বাগদাদ বিমানবন্দরে ইরানের সবচেয়ে প্রিয় সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছে।'
নিষেধাজ্ঞাগুলো একটি ধ্বংসাত্মক এবং অমানবিক অস্ত্র যা দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে ব্যবহৃত হয় বলে জোর দিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, অত্যাবশ্যক ওষুধের প্রবেশ থেকে বঞ্চিত হওয়া নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বেদনাদায়ক পরিণতিগুলোর মধ্যে একটি যার ফলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। এটা কেবল মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন নয় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
বিগত বছরে বিশ্ববাসী ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠীর আসল রূপ দেখেছে,তারা দেখেছে কিভাবে এই শাসক গোষ্ঠীর নেতারা অপরাধ করে যাচ্ছে এবং এগারো মাসে তারা গাজায় ৪১ হাজারের বেশি নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে যাদের বেশিরভাগই নিরপরাধ মহিলা এবং শিশু। কিন্তু ইসরাইল এবং তার সমর্থকরা গণহত্যা, শিশুহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে যাচ্ছে। অথচ তারা এগুলোকে বলছে "বৈধ প্রতিরক্ষা"।
পশ্চিম এশিয়া এবং বিশ্বে ৭০ বছরের নিরাপত্তাহীনতার দুঃস্বপ্নের অবসানের একমাত্র উপায় ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পুনরুদ্ধার করার উপর জোর দিয়ে মাসুদ পেজেশকিয়ান আরা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে গাজা ও লেবাননে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সহিংসতা ও যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
ইরানের মুক্তিকামীতা ও জনপ্রিয় আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন যে ইসরাইলই ইরানের মাটিতে বিজ্ঞানী, কূটনীতিক এবং আমাদের অতিথিদের হত্যা করেছে এবং গোপনে এবং প্রকাশ্যে উগ্র তাকফিরি গোষ্ঠী দায়েশ এবং অন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছে।
পেজেশকিয়ান বলেন, ইরান ইউক্রেন এবং রাশিয়ার জনগণ সহ সবার জন্য শান্তি চায় এবং জোর দিয়ে বলেন যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সব সময় যুদ্ধের বিরোধিতা করে করে আসছে। ইউক্রেনে সামরিক সংঘাত দ্রুত বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান হবে।
পার্সটুডে/এমবিএ/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।