রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধানের কথা বলে আসছে ইরান
ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ ঢাকতেই ইউক্রেন ইস্যুতে ইরান-বিরোধী মিথ্যাচার করছে পাশ্চাত্য
ইসলামী ইরান তার ওপর ইউরোপীয় জোট ও ব্রিটেনের ঘোষিত নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তেহরান বলেছে, এইসব নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হল গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা ও ইসরাইলি যুদ্ধকামিতার দিক থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়া।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি হামানে ইরানের কয়েকজন ব্যক্তি ইরান এয়ারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর এইসব নয়া নিষেধাজ্ঞাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অজুহাত কেন্দ্রীক বলে নিন্দা জানিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপকে তিনি অন্যায্য ও অযৌক্তিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।
ইরান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে দিয়েছে ও ইরানের যাত্রীবাহী বিমানের মাধ্যমে রাশিয়াকে ওইসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে এমন উদ্ভট অভিযোগের ভিত্তিতে এইসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ, যদিও ইরান জোরালোভাবে এই অভিযোগকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে অস্বীকার করে আসছে।
বাকায়ি বলেছেন, ইউক্রেন-সংঘাত ইস্যুতে ইরানের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট ও নৈতিক। এই সংঘাতের শুরু থেকেই ইরান বার বার বলে আসছে যে তেহরান যুদ্ধের বিরোধী এবং প্রত্যেক দেশের উচিত অন্য দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান জানানো। ইরান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়ে আসছে বলে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু ইরানের এইসব অবস্থান ও পদক্ষেপ সত্ত্বেও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেন সংঘাতে ইরানের সামরিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছে কোনো প্রমাণ তুলে ধরা ছাড়াই যা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।
বাকায়ি ইরানের বিরুদ্ধে ইইউ ও ব্রিটেনের অভিযোগগুলোকে কপটতাপূর্ণ বলে অভিহিত করে বলেছেন, এইসব নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হল গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা ও পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইলি যুদ্ধকামি তৎপরতার দিক থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়া।
ইসলামী ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যায় ব্রিটেন ও জার্মানির সরবরাহ করা গণ-বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ফিলিস্তিনি ও লেবাননি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় জার্মান ও ব্রিটিশ সরকারও জড়িত। তাদের এইসব পদক্ষেপ মানবাধিকার ও গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে বাকায়ি উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, সোমবার ইইউ ইরানের তিনটি এয়ারলাইন্স- ইরান-এয়ার, মাহান-এয়ার এবং সাহা’সহ মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান ও সাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ব্রিটেন।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ ইরানের কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নতুন করে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার বিরুদ্ধে নিজের তীব্র ক্ষোভের কথা জানাতে হাঙ্গেরির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হাঙ্গেরির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এ ব্যাপারে ইরানের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে ইরানের কূটনৈতিক বিভাগের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে ইরানের প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত এবং দেশের স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে এ ধরনের চুক্তি করা হয়। কাজেই এটি এমন কোনও বিষয় নয় যে তৃতীয় পক্ষ তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তিনি গণহত্যাকারী ইসরাইলের কাছে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে ও মানবাধিকারসহ আন্তর্জাতিক আইনগুলো মেনে চলতে ইইউ'র প্রতি আহ্বান জানান।
ওদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা- ইরান এয়ারের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ইউরোপের সকল গন্তব্যের সব ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে ইরান এয়ার।
সোমবার নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এটি সকল যাত্রীকে এসএমএস করে জানিয়ে দিয়েছে, ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ইরান এয়ার। তেহরানের ইমাম খোমেনী (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের এসএমএসটি পাঠানো হয়।
ইরান থেকে ইউরোপীয় রুটগুলোতে ইরানের একমাত্র যে এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করত সেটি হচ্ছে ইরান এয়ার। সেটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ফলে ইরানি আর কোনো বিমান ইউরোপে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে না। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।