মায়েরা কীভাবে কন্যাসন্তানদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারেন?
পার্স টুডে: বয়ঃসন্ধিকাল কিশোরীদের জন্য একটি সংকটময় সময়; যা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তনে ভরপুর। এই সময়ে মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ হিসেবে মায়েদের মানসিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মা-ই হলেন সন্তানের জীবনের প্রথম এবং সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আচরণগত রোল মডেল।
মায়েদের আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ সরাসরি কন্যাদের ওপর প্রভাব ফেলে। একজন মায়ের দায়িত্ব শুধু দেখভাল নয়, বরং আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতার শিক্ষা দেওয়া। এমনটি হলে, কন্যারা ভবিষ্যতে একটি দৃঢ় ও স্বাধীন পরিচয় নিয়ে সমাজে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
আবেগগত সংযোগ: একটি গভীর ও কার্যকর বন্ধন
মা-মেয়ের মধ্যে আবেগপূর্ণ সম্পর্ক গঠনের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয় কৈশোরে। এটি মেয়েদের নিরাপত্তা ও সমর্থনের অনুভূতি দেয়। যে মা মেয়ের কথা শোনেন, অনুভূতি বোঝেন, সেই মা তার কন্যার আত্মপরিচয় গঠনে ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বলিষ্ঠ সহায়ক হতে পারেন।
অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ নয়
অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ, যেমন সর্বক্ষণ নজরদারি বা সামাজিক মেলামেশায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা, প্রায়ই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আনে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে কিশোরীরা নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য মিথ্যা কথা বলতে শুরু করে। এতে মা-মেয়ের সম্পর্কের ওপর আঘাত আসে এবং মেয়েরা সিদ্ধান্ত নেওয়া ও স্বাধীনচেতা হওয়ার দক্ষতা হারায়।
নিয়ন্ত্রণের বদলে শিক্ষা
বিধিনিষেধের পরিবর্তে, মা-বাবারা মেয়েদের ঝুঁকি নেওয়ার দক্ষতা শেখাতে পারেন, যেমন অনিরাপদ পরিস্থিতি পরিচালনা করা বা সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। খোলামেলা আলোচনা, শ্রবণ ও সম্মান প্রদর্শন একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলে।
নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল শেখানো এবং সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশিক্ষণই হওয়া উচিত আধুনিক মাতৃত্বের ভিত্তি। মায়েরা যদি এমন এক পরিবেশ তৈরি করেন যেখানে মেয়েরা নিরাপদে নিজের অনুভব প্রকাশ করতে পারে, তাহলে পরিবারে মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হয়।
জীবনের দক্ষতা শেখানো: সফল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি
সমস্যা সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সময় ব্যবস্থাপনার মতো জীবনদক্ষতা শেখানোর মাধ্যমে মা কন্যাকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন। এসব দক্ষতা কন্যাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং আত্মপরিচয় গঠনে সহায়ক হয়।
প্রতিভা বিকাশে সহায়তা ও দুর্বলতা দূর করা
প্রতিটি কন্যারই থাকে নিজস্ব প্রতিভা ও সামর্থ্য। মা যদি তাকে অনুপ্রাণিত করেন, পথ দেখান এবং দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন, তাহলে মেয়ের আত্মবিশ্বাস ও উদ্দীপনা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এতে মা-মেয়ের সম্পর্কও হয়ে ওঠে দৃঢ় ও ইতিবাচক।
ইসলামের দৃষ্টিতে কন্যাসন্তানের মর্যাদা
পবিত্র ইসলাম ধর্মে কন্যাসন্তানকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “যার একটি কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাকে ভালোভাবে লালন-পালন করে, শিক্ষা দেয় এবং আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত থেকে তাকে যথাযথভাবে উপকৃত করে, সেই কন্যা তার পিতা-মাতার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার ঢাল হবে।”
মায়েরা যদি ভালোবাসা, বোঝাপড়া ও দিকনির্দেশনার মাধ্যমে কন্যাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তবে সেই কন্যারা শুধু পরিবারেই নয়, সমাজেও আলোকিত ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।#
পার্সটুডে/এমএআর/১০