ইরান ধর্মীয়-জাতিগত বহুত্বের রোল মডেল, তবু কেন অপপ্রচার?
(last modified Thu, 03 Jul 2025 12:18:41 GMT )
জুলাই ০৩, ২০২৫ ১৮:১৮ Asia/Dhaka
  • সিয়ামাক মোরেহ সাদেক
    সিয়ামাক মোরেহ সাদেক

পার্সটুডে: মিডল ইস্ট মনিটর এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ইরানের সংসদের সাবেক ইহুদি সদস্য সিয়ামাক মোরেহ সাদেক বলেছেন, "আমরা ইরানি সংস্কৃতি ছাড়া বাঁচতে পারি না।"

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা সরকারগুলো বিশ্ববাসীর কাছে ইরানের সংস্কৃতি ও সমাজের একটি বিকৃত ও বাস্তবতাবিবর্জিত চিত্র তুলে ধরছে। অথচ ইরান একটি জটিল ও বৈচিত্র্যময় সমাজ যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী একসাথে বসবাস করে এবং তাদের দেশের প্রতি গভীর অনুভব রাখে— যা শত্রুরা প্রায়শই উপেক্ষা করে এবং যার জন্য তাদের মূল্যও দিতে হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, "পশ্চিমা বর্ণনায় ইরানকে এমন একটি রুদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে বৈচিত্র্য স্বীকৃত নয় এবং কেবল একটি আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ ইরানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচন হয়, যেখানে ভিন্নমতাবলম্বী প্রার্থীরা নীতিনির্ধারণী ইস্যুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।"

সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে ইরান পশ্চিমা বর্ণনার তুলনায় অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। জাতি, মতবাদ ও নাগরিক চিন্তাধারায় গঠিত এই সমাজ— যা সরলীকৃত পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে। ইসলাম-ভীতি ছড়ানোর প্রবণতার মধ্যেও এই বাস্তবতা পশ্চিমা প্রচারে প্রায় অনুপস্থিত।

ইরান বহু জাতিগোষ্ঠীর আবাসভূমি। তারা স্বাধীনভাবে সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করে থাকে। জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এখানে বাস্তব ও স্বীকৃত। সংবিধানে সকল ধর্ম ও মতের প্রতি সহনশীল আচরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইহুদি জনসংখ্যা রয়েছে ইরানে। এখানকার সিনাগোগগুলো মুক্তভাবে কার্যক্রম চালায়, ইহুদি স্কুলও সক্রিয়। আর্মেনীয় অঞ্চলগুলোতে রয়েছে গির্জা, আর জারথুস্ত্রীদের উপাসনালয় ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।

রাজনীতিতেও ইরানে আছে সংস্কারপন্থী, রক্ষণশীল ও মধ্যপন্থী ধারা। প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনে তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। এমনকি পশ্চিমা গণতন্ত্রেও যেমন ঘাটতি থাকে, তেমন কিছু সীমাবদ্ধতা ইরানেও থাকতে পারে।

যুবসমাজ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ, তারা প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং পরিবর্তনের পক্ষে সক্রিয়। নারী সমাজও বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে— যা ইরানের সমাজব্যবস্থার বহুত্ববাদী চরিত্রকে প্রতিফলিত করে।

ইরানে বহুত্ববাদ কেবল একটি মতবাদ নয়, বরং সমাজের বাস্তব রূপ। সংখ্যালঘুরা তাদের নিজস্ব পরিচয় ও ঐতিহ্য বজায় রেখেই সমাজে সক্রিয়ভাবে টিকে আছে। ইরানের রাজনৈতিক সমাজ ও নাগরিক পরিসরেও বহুত্ববাদের উপস্থিতি স্পষ্ট।

ইরানকে পশ্চিমা মডেলে মাপা কিংবা বোঝার চেষ্টা করাটা সঠিক পন্থা নয়। ইরানের সংবিধান জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। তারা স্বাধীনভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। যেমন, ইরানে ইহুদিরা ২৭০০ বছর ধরে বসবাস করছে। তারা নিজেদের ইসরাইলি নয়, বরং ইরানি ইহুদি বলেই পরিচয় দেয়। তাদের মতে, ইরানে কোনো ইহুদিবিদ্বেষ নেই, বরং তারা পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করে।

"ইরানিরা ইহুদিদের হত্যা করতে চায়"— এই মিথ্যা কথাকে ইরানি ইহুদি নেতারা বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সাবেক ইহুদি সংসদ সদস্য সিয়ামাক মোরেহ মাদেক স্পষ্টভাবে বলেছেন, "আমরা ইরানি সংস্কৃতি ছাড়া বাঁচতে পারি না।"

পার্সটুডে/এমএআর/৩