যে মেয়েটি বৈশ্বিক হুমকিকে ইরানের গৌরবে রূপান্তর করলেন
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i154844-যে_মেয়েটি_বৈশ্বিক_হুমকিকে_ইরানের_গৌরবে_রূপান্তর_করলেন
পার্সটুডে:  এটি এমন এক মেয়ের সংগ্রামের গল্প, যে নিজের বাড়ির গ্যারেজ থেকে প্লাস্টিককে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তরিত করে পুরো বিশ্বের কাছে ইরানের নাম উজ্জ্বল করেছে। কোম শহরের শান্ত গলিতে জন্ম নেওয়া সেই মেয়েটির নাম সামিয়া শায়েস্তাপুর।
(last modified 2025-12-07T13:56:09+00:00 )
ডিসেম্বর ০৭, ২০২৫ ১৯:৫২ Asia/Dhaka
  • সামিয়া শায়েস্তাপুর
    সামিয়া শায়েস্তাপুর

পার্সটুডে:  এটি এমন এক মেয়ের সংগ্রামের গল্প, যে নিজের বাড়ির গ্যারেজ থেকে প্লাস্টিককে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তরিত করে পুরো বিশ্বের কাছে ইরানের নাম উজ্জ্বল করেছে। কোম শহরের শান্ত গলিতে জন্ম নেওয়া সেই মেয়েটির নাম সামিয়া শায়েস্তাপুর।

পার্সটুডে জানিয়েছে, সামিয়া শায়েস্তাপুর শৈশব থেকেই অন্যরকম ছিলেন। ছোটবেলায় যখন অন্য শিশুরা খেলাধুলা করত, তখন সে তীব্র রাসায়নিকের গন্ধ আর একটা ছোট্ট টেবিল ল্যাম্পের আলোয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যারেজে বসে প্লাস্টিকের টুকরো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত। তার মনে একটাই স্বপ্ন: “পৃথিবী বাঁচাও, ইরান বাঁচাও”।

তিনি বলেন, প্রথম যেদিন জানলেন যে, প্লাস্টিক প্রকৃতিতে ৫০০ থেকে ৭০০ বছর পর্যন্ত রয়ে যায়, তার জগৎ বদলে গেল। সেই দিন থেকে তার কৈশোর আর পার্টি-আড্ডায় কাটেনি; কেটেছে শুধু পরীক্ষা, ব্যর্থতা আর আবার চেষ্টার মধ্যে। কিন্তু ব্যর্থতাগুলো তাকে ক্লান্ত করতে পারেনি; কারণ তার হৃদয়ে এক আলো জ্বলছিল যা তাকে বলত: "তোমাকেই পথ খুঁজে বের করতে হবে।"

চৌদ্দ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, অশ্রু, হতাশা আর নতুন করে আশার পর অবশেষে তিনি আবিষ্কার করলেন “অ্যান্টি-পলিমার”। এটি এমন একটি পদার্থ যা প্লাস্টিককে তার আদি অবস্থায় ফিরিয়ে এনে পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও ব্যবহারযোগ্য জ্বালানিতে পরিণত করতে পারে।

যখন তার উদ্ভাবন আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধিত হলো, তখনই তিনি বুঝতে পারলেন যে, সেই ঘুমহীন রাত আর গলায় আটকে যাওয়া কান্নাগুলো- সবই মূল্যবান ছিল।

এই উদ্ভাবন, শিল্পায়ন পরিকল্পনার পর দৈনিক পাঁচ টন ক্ষমতা নিয়ে ২০২৩ সালে তেহরানে প্লাস্টিককে কঠিন জ্বালানিতে রূপান্তরিত করার প্রথম কারখানায় পরিণত হয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত এই কারখানাটি কোনো দূষণ ছাড়াই কাজ করে। প্রথমবার প্লাস্টিক জ্বালানিতে রূপান্তরিত হতে দেখার সময় তাঁর চোখে আনন্দের অশ্রু ভেসে আসে—শৈশবের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো। ওই বছরই তিনি পেয়েছেন জাতীয় পরিবেশ পুরস্কার।

জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়ার পর তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সাথে সাক্ষাতের জন্য চেষ্টা শুরু করেন। অবশেষে নেতার কার্যালয় থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তাকে সাক্ষাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়।

বহুপ্রতিক্ষিত সেই সাক্ষাতে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী তাকে উদ্দেশ করে একটি বাক্য বলেছিলেন যা তার আত্মার গভীরে প্রোথিত হয়: "তোমাকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্তরে ইরানের নামকে গৌরবান্বিত করতে হবে।"

এ কথা শুনে সামিয়ার চোখে অশ্রু জমে এলো এবং তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন: "ইরানের সম্মানার্থে আমি একদিনের জন্যও পিছিয়ে দাঁড়াব না।"

সর্বোচ্চ নেতা তাকে নিজের কেফিয়াহ (রুমাল) উপহার দেন। এই উপহার তার জন্য শুধু একটি স্মারক ছিল না; এটি একটি অঙ্গীকারের অংশ যা একটি আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিণত হয়। তিনি যখনই হৃদয়ে দুর্বল বোধ করতেন, ওই কেফিয়াহ দেখে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেন।

বিশ্বের বড় বড় দেশ তার প্রযুক্তিটি উচ্চ মূল্যে ক্রয় বা রেজিস্টার করতে চাইলে সামিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি যখন আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি এটি কিনতে চাইল, তিনি সবসময় একটি বাক্য পুনরাবৃত্তি করতেন: "ইরানকেই প্রথম দেশ হতে হবে যারা এই প্রযুক্তির সুফল ভোগ করবে।"

তিনি বিশ্বাস করেন যে, এমন কিছু করা সম্ভব যাতে প্লাস্টিক হুমকি না হয়ে বরং একটি সুযোগ হয়; প্রকৃতির জন্য বোঝা না হয়ে ইরানের ভবিষ্যতের জন্য জ্বালানি হয়।

ড. সামিয়া শায়েস্তাপুর যিনি একটি সাধারণ পার্কিং থেকে শুরু করেছিলেন, আজ তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, কখনও কখনও সবচেয়ে বড় বিপ্লব অত্যাধুনিক গবেষণাগারে নয়, বরং শুরু হয় এক তরুণী হৃদয়ে—যে মেয়েটি ইরানের নাম আগের চেয়ে আরও উচ্চকিত করে বিশ্বে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।#

পার্সটুডে/এমএআর/৭